ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলার শুনানিতে আদালতে যা হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ম্যানহাটনে আদালত কক্ষে একজন অভিযুক্ত হিসেবে প্রবেশ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। সে সময় তাঁর পরনে ছিল চিরপরিচিত নীল স্যুট আর লাল টাই। আদালত কক্ষের সামনের দিকে তার জন্য নির্ধারিত জায়গার দিকে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, যেখানে তার আইনজীবীরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন তাঁর চেহারা ছিল বিষণ্ন। খবর বিবিসির।
এর আগে তিনি ম্যানহাটনের আদালতে হাজির হলে প্রক্রিয়ামাফিক আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়। যার মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এসময় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি অভিব্যক্তি বা শারীরিক ভাষার মাধ্যমেও কিছু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতা কাইলা ইপস্টেইন বলছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির আসনের সরাসরি পাঁচ সারি পেছনে একদল সাংবাদিকের সঙ্গে আমি বসেছিলাম। পুলিশের একটি দল সেখানে নজরদারি করছিল। আদালতে আমাদের ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।
যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫তলা নিচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠান্ডা মাথায় আদালত পরিচালনা করছিলেন।
শুনানির বেশিরভাগ সময়জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি।
যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক, ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি।’ এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কি না?’ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ’।
এরপর বিচারক বলেন, ‘অন্য যেকোনো অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন।’
প্রসিকিউটর যুক্তি উপস্থাপনে উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকিমূলক পোস্ট করেছিলেন যার মধ্যে একটিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে সম্ভাব্য ‘মৃত্যু ও ধ্বংস’ সম্পর্কে হুমকি দেওয়া হয়।
অপরদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, ‘তাদের মক্কেল এই মামলায় হতাশ ও বিরক্ত ছিলেন। যা তিনি অবিচার বলে মনে করেন।’
তবে বিচারক বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, ‘আমি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নই যে, হতাশাকে বিদ্বেষমূলক বা বাজে ভাষা ব্যবহারের যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের উত্তেজিত বক্তব্য না দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দেওয়ার বিষয়টি কোনো আদেশ নয়, বরং অনুরোধ ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম ঘটলে তিনি বিষয়টিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বাধ্য হবেন।’
প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনানি শেষ করেন বিচারক। এরপর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ালে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। আইনজীবীদের সঙ্গে শান্তভাবে তিনি কথা বলেন। তবে তার কয়েক সারি পেছনে বসে থাকা সাংবাদিকরা সেসব কিছুই শুনতে পাননি।
এরপর তিনি ঘুরে আদালতের মধ্যে প্যাসেজে চলে যান এবং পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। বাইরে অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি। তার অভিব্যক্তি ছিল বেশ গম্ভীর। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লোরিডায় গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।
ট্রাম্প মুক্তি পাওয়ার পর পুরো বিষয় নিয়ে তার মক্কেল হতাশ ও বিচলিত জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী টড ব্লাঞ্চ বলেন, ‘এটা ভালো দিন নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সঙ্গে এ দেশে এমনটি ঘটবে বলে আশা করি না। কেউই আশা করেন না। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে লড়াই করব।’
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক অধ্যায় তৈরি হলো। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় তাকে আদালতের মুখোমুখি হতে হলো