পেরুর মাওবাদী গেরিলা নেতা গুজমান মারা গেছেন
লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর মাওবাদী গেরিলা নেতা আবিমায়েল গুজমান (৮৬) কারাবন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। রোববার বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পেরুর মাওবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘শাইনিং পাথ’-এর প্রতিষ্ঠাতা গুজমান। দর্শনশাস্ত্রের সাবেক এই অধ্যাপক সন্ত্রাসবাদ ও দেশদ্রোহের অভিযোগে ১৯৯২ সাল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করে আসছিলেন।
গত জুলাইয়ে কারাবন্দী অবস্থায় গুজমান নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েন। তখন তাঁকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
পেরুতে গুজমান প্রতিষ্ঠিত মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে দেশটির সরকারি বাহিনীর এক দশকের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলে। এই সংঘাতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়।
১৯৯২ সালে গুজমান গ্রেপ্তার হন। তিনি গ্রেপ্তার হলে তাঁর সংগঠন মারাত্মকভাবে ধাক্কা খায়। তাঁর সংগঠনের কিছু সদস্য এখনো পেরুর কোকা উৎপাদনকারী অঞ্চলে সক্রিয়।
১৯৬৯ সালে গুজমান ও অন্য ১১ ব্যক্তি মিলে ‘শাইনিং পাথ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মাওবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে এই গেরিলা সংগঠন পেরুর ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্র’ উৎখাত করে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘গণযুদ্ধ’ পরিচালনার চেষ্টা করে। গোষ্ঠীটি শুরুতেই সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়নি। একপর্যায়ে তারা ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র তৎপরতায় জড়িত হয়।
পেরুতে এক যুগের সামরিক শাসনের পর ১৯৮০ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেওয়া হয়। এ সময়ে শাইনিং পাথের সশস্ত্র বিপ্লবী তৎপরতা শুরু হয়। শাইনিং পাথ শুধু নির্বাচনই বর্জন করেনি, তারা আয়াকুছোতে ব্যালট বাক্স জ্বালিয়ে নির্বাচন ব্যাহত করে।
গুজমান১৯৮০-এর দশকে শাইনিং পাথ যে সশস্ত্র গেরিলা তৎপরতা শুরু করে, তা সামাল দিতে পেরুর সরকার হিমশিম খেতে থাকে। এমনকি জরুরি অবস্থাও জারি করতে হয়।
শাইনিং পাথের আনুমানিক সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। তাঁদের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে পেরুতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়।
১৯৯২ সালে রাজধানী লিমায় গ্রেপ্তার হন গুজমান। গোপন সামরিক আদালতে তাঁর বিচার হয়। বিচারে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।