অনৈতিক সম্পর্ক, অবশেষে সিঙ্গাপুরের স্পিকার ও এমপির পদত্যাগ
সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্টের স্পিকার ও একজন নারী সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। অনৈতিক সম্পর্কের জেরে আজ সোমবার (১৭ জুলাই) পদত্যাগ করেন দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের এই দুজন। এতে করে বিপাকে পড়েছে দেশটির ক্ষমতাসীনরা। কারণ, চলতি সপ্তাহেই দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী এস ইশ্বরান। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, স্পিকার ও সংসদ সদস্যের পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং। তিনি বলেন, ‘পিপল অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী শালীনতা ও ব্যক্তিগত আচরণ বজায় রাখার শর্ত মেনে চলার ক্ষেত্রে স্পিকার তান চুয়ান জিন ও এমপি চেং লি হুইয়ের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।’
পদত্যাগ করা দুজন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিল জানিয়ে লি সিয়েন লং বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের সম্পর্কে ইতি টানার জন্য বলা হয়েছিল। তবে, তারা সেটি চালিয়ে যাচ্ছিল।’
দীর্ঘ ৬৪ বছর ধরে সিঙ্গাপুরের ক্ষমতায় রয়েছে পিএপি পার্টি। দুর্নীতিমুক্ত সরকার নিয়ে গর্ব করে ক্ষমতাসীনরা। তবে, সম্প্রতি সময়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশটির একের পর এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মসহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ক্যাবিনেট মন্ত্রী এস ইশ্বরানকে গ্রেপ্তার করে সিঙ্গাপুরের দুর্নীতি দমন সংস্থা। তবে, বর্তমানে জামিনে রয়েছে তিনি। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন সংস্থাকে তদন্তে সাহায্য করবে।
এর আগে, সিঙ্গাপুরের আরও দুই জ্যৈষ্ঠ ক্যাবিনেট মন্ত্রীর অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সরকারি জমিতে আবাসন করে ভাড়া দেওয়া অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। তবে, সেই দফায় তদন্তে তাদের অভিযুক্ত করা হয়নি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেমটির রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সযযোগী অধ্যাপক ইউজেনে তান বলেন, ‘১৯৮৬ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো চাপে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ওই বছরে এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ও পরে, তা তদন্ত পর্যন্ত হয়।’
আইনের এই শিক্ষক বলেন, ‘আমার মতে, বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ওপর জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাস প্রভাবিহ হয়েছে। এতে করে রক্ষণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে পিএপি পার্টি।’
২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে সিঙ্গাপুরের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লি এর আগে বলেছিলেন, ‘আমি ক্ষমতা ডেপুটি লরেন্স ওংয়ের কাছে হস্তান্তর করব।’ তবে, কখন ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা জানাননি তিনি।
লি বলেন, ‘৫৪ বছর বয়সী স্পিকার বিবাহিত ও তার দুই সন্তান রয়েছে। অনৈতিক সম্পর্কের জন্য এর আগেও তাকে পদত্যাগের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।’
এই সম্পর্কের ইতি টানার জন্য স্পিকারকে আগেই জানানো হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সম্পর্ক চলছিল সম্প্রতি আমার কাছে এই তথ্য আসে।’
পদত্যাগপত্রে পরিবারকে সময় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্পিকার তান। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, ‘পরিবারকে সময় দিতে আমি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার পদ ছেড়ে দিচ্ছি...আমাকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং পরিবারকে সুস্থ করতে সাহায্য করতে হবে।’