গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত, পৌঁছেছে ত্রাণের দ্বিতীয় বহর
যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিটমহল গাজার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় রোববার (২২ অক্টোবর) বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে ১৭টি ট্রাকের আরও একটি বহর ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছেছে।
এদিকে, ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকা এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লেবাননের হিজবুল্লার প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সংঘাতে জড়ালে সেটা হবে তাদের ‘জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল’।
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতকে যারা উসকে দিতে চাইছে ওয়াশিংটন তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে তার ভূমিকা পালনে কোনো ইতস্তত করবে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অতর্কিত হামলায় এক হাজার ৪০০ লোককে হত্যা করা হয় এবং আরও ২০০ জনেরও বেশি লোক অপহৃত হয়। এই হামলার পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজায় অবিরাম বিমান হামলা চালাতে থাকে যাতে এ পর্যন্ত চার হাজার ৬০০ লোক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নিরীহ সাধারণ ফিলিস্তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২১ অক্টোবর) ও রোববারের বিমান হামলায় গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল বালাহ এলাকাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়টি জানায়, রাতব্যাপী হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৩০টিরও বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার মর্গগুলোতে দেখা গেছে অশ্রুসিক্ত চোখে মানুষের ভিড়, যারা সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মরদেহগুলো থেকে নিজেদের স্বজনকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, চলমান সংঘাতে তাদের ২৯ জন কর্মী নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন শিক্ষক।
গাজার মর্গগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ না করায় এবং সেগুলো পরিপূর্ণ থাকায় বেশ কয়েকটি অজ্ঞাত মরদেহ গণকবরে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্রমাগত বোমাবর্ষণে শহরটির পরিষেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিঘ্নিত হচ্ছে জরুরি পরিষেবা।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা সীমান্তের কাছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ছোড়া ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গোলার আঘাতে তাদের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষমন্ত্রী ইয়োআভ গালান্ট জানান, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
গালান্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই যুদ্ধ এক, দুই বা তিন মাস পর্যন্ত চলতে পারে। তবে, তা শেষ হওয়ার পর হামাস বলতে আর কিছু থাকবে না।’
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রোববার তাদের অনিচ্ছাকৃত হামলায় মিসরের একটি সীমান্ত চৌকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কায়রোর কাছে ক্ষমাও চেয়েছে তারা।
এদিকে হামাস সরকার বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এক লাখ ৬৫ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকা রক্তক্ষয়ী সংঘাত নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটন ও ইসরায়েল কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ইরান। দেশটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এই সংঘাত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ‘গাজায় মানবতাবিরোধী তৎপরতা ও গণহত্যা বন্ধে উদ্যোগ না নিলে সংঘাত এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।’