শীতের বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্টে গাজার বাস্তুচ্যুতরা
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শীতকালের বৃষ্টি হয়েছে। এতে করেই সেখানে শীত বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগও। আজ বুধবারের (১৩ ডিসেম্বর) বৃষ্টি গাজার বাস্তুচ্যুতদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, যুদ্ধের জেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দা। জনাকীর্ণ সংকীর্ণ জায়গায় তাঁবু করে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। তবে, শীতকালের বৃষ্টি সেই জীবনকেও আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।
বাড়ি হারিয়ে তাঁবুতে ঠাঁই মিলেছে গাজার বাসিন্দা আজিজা আল-সাবাওয়ারির। বৃষ্টিতে তাদের তাঁবুতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেই পানি বের করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ৩৮ বছর বয়সী এই মা বলেন, ‘শীতে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার মেয়ের পায়ে কোনো জুতা নেই। মনে হচ্ছে, আমরা ভিক্ষুক। কেউ আমাদের কথা চিন্তা করে না। কেউ সাহায্য করে না।’
এএফপি বলছে, বৃষ্টির জেরে গাজার তাপমাত্রা রাতারাতি অনেক কমে গেছে। আর রাতের দিকে তাপমাত্রা আরও নিচে নামে। বৃষ্টির কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে অনেকগুলো তাঁবু পানিতে ডুবে গেছে। ভালো আশ্রয় না পেয়ে অনেকে প্লাস্টিকের চাদরের নিচে ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে।
গত দুই মাসে যুদ্ধের জেরে গাজার ১৯ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের মধ্যে একজন আজিজা আল-সাবাওয়ারি। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্দেশে গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দা দক্ষিণ গাজার রাফাহ সীমান্তে অবস্থান করছে।
উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বাস করতো আজিজা আল-সাবাওয়ারি। তবে, তাকে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। পরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে পরিবারসহ আশ্রয় নেন এই মা। এরপর জোরপূর্বক পরিবারটিকে রাফা সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
এএফপি বলছে, মিসর সীমান্তের পাশের শহর রাফাহ বাস্তুচ্যুতদের একটি বিশাল শিবিরে পরিণত হয়েছে, যেখানে কাঠ এবং প্লাস্টিকের শিট ব্যবহার করে শত শত তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।
সেখানে থাকা বাস্তুচ্যুত বিলাল আল-কাসাস বলেন, ‘আমরা পাঁচ দিন খোলা আকাশের নিচে কাটিয়েছি। এখন তাঁবু পেলেও তা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে।’ বৃষ্টির সঙ্গে তীব্র বাতাসে তাঁবুর ভঙ্গুর কাঠামো কাঁপছে। বাস্তুচ্যুতরা প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে সেই কাঠামো শক্তের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৪১ বছর বয়সী বিলাল আল-কাসাস বলেন, ‘আমরা কোথায় পাড়ি জমাবো? আমাদের মর্যাদা চলে গেছে। নারীরা কোথায় স্বস্তি পাবেন? কোনো বাথরুম নেই। আমরা মৃত্যুর সময় গুনছি। আমরা আর খেতে ও পান করতে চাই না।’
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার মতে, গত ৩ ডিসেম্বরের পর থেকে কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত রাফাহয় পৌঁছেছে। সেখানে বাস্তুচ্যুতদের ভিড়ে কাজে হিমশিম খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফায় অবস্থান করাদের খাদ্য, পানি ও আশ্রয় প্রয়োজন। পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যতীত সেখানে রোগের সংক্রমণ বাড়বে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।