‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’ কীভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভর করছে?
গাজা থেকে গ্রিনল্যান্ড, বিশ্বজুড়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রভাব ইতোমধ্যে অনুভূত হচ্ছে। প্রচলিত কূটনৈতিক নিয়ম-নীতি পাশ কাটিয়ে তাঁর আসন্ন প্রশাসন এক ধরনের নিবিড় বৈশ্বিক চাপ প্রসারে কাজ করছে, যা ইতোমধ্যে ফলদায়ক বলে দৃশ্যমান হচ্ছে।
ট্রাম্প দ্রুতই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যদিও মার্কিন মিত্রদের পাশাপাশি বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাসব্যাপী শ্রমসাধ্য আলোচনা ফলপ্রসূ করতে কাজ করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুধু নভেম্বরে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের ফলে সম্ভব হয়েছে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা হোয়াইট হাউসে না থেকেও অনেক কিছু অর্জন করেছি। আমি যখন ফিরব, তখন যেসব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটবে, সেসব কল্পনা করে দেখুন।’
এটা অস্বীকার করা কঠিন যে, ২০ জানুয়ারি অভিষেকের আগে ইসরায়েল-হামাস চুক্তি না হলে ট্রাম্পের অঘোষিত হুমকি ‘মূল্য দিতে হবে’ এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েলি সরকারের মধ্যে যারা ট্রাম্পের প্রতি উৎসাহী সমর্থন দেখাতে আগ্রহী, তাদেরকে অন্তত মাথায় রাখতে হবে, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বন্ধু ও শত্রুকে সামলাতে সমানভাবে পারদর্শী ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ট্রাম্প, যা তাঁকে নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভে শক্তি জুগিয়েছে।
একজন ইসরায়েলি কূটনীতিক জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের অদম্য সমর্থন হঠাৎ কমে যেতে পারে এমন উদ্বেগের মাঝেও ‘ট্রাম্পকে খুশি রাখা’ তার দেশের জন্য ‘জাতীয় স্বার্থের’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এটি যদিও একটি স্থিতিশীল ঐতিহ্যগত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তির মতো হয়নি, কিন্তু স্বল্প মেয়াদে ট্রাম্প এক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকাতেই রয়েছেন।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে শুধু ইসরায়েলে নয়, বৈশ্বিক অন্যান্য বিষয়গুলোতেও। গ্রিনল্যান্ড কেনার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ডেনমার্কের মালিকানাধীন বিস্তীর্ণ হিমায়িত অঞ্চল এবং এর বিশাল খনিজ মজুত নিয়ে কৌশলগত আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। অথচ ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেই এ পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে ওই সময় উপহাস করা হয়েছিল।
আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় রেখে অথবা স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে সরাসরি আলোচনা এড়াতে কিছু দেশ ইতোমধ্যে অগ্রিম উদ্যোগ ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের আগে ২৮ হাজার মার্কিন সৈন্য নিজেদের দেশে রাখার খরচ ভাগ করে নেওয়ার জন্য পাঁচ বছরের চুক্তিতে সম্মত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের স্মৃতি থেকে সিউল এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা তড়িঘড়ি সম্পন্ন করেছিল। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এশিয়ার প্রধান মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক শক্তির ওপর বিনা খরচে ভর করার অভিযোগ তুলেছিলেন। সে সময় দেশটিতে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের জন্য বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রদানের দাবি করেন তিনি।
এ ছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংস যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প ফ্যাক্টর পরবর্তীতে অসাধারণ ফলাফল বয়ে আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একবার বলেছিলেন, তিনি একদিনেই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে এখন সহিংসতার অবসান ঘটানোর জন্য আরও গুরুতর প্রস্তাবের ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি। ক্রেমলিনের শক্তিধর নেতা ভ্লাদিমির পুতিন ও বিপর্যস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উভয়েই সতর্কতার সঙ্গে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।