জমে উঠেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা
করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও জমে উঠেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আজ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণে বাড়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। এদিন সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও দুপুরের পর ধীরে ধীরে জমে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
বইমেলা চত্বর ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক পরে আর্চওয়ে হয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। সেখানে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা ও হাত স্যানিটাইজ করতে হচ্ছে। মেলায় ঢুকে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছেন পাঠকেরা।
মেলায় এখনও চলছে বেশ কিছু স্টল নির্মাণের কাজ। রং করা হচ্ছে অনেক স্টলে, আবার কোথাও লাগানো হচ্ছে স্টলের ছাদ বা নামফলক। চলছে নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলেও শিগগিরই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পুরোদমে বই বিকিকিনির কাজ শুরু করতে পারবেন বলে আশা বইয়ের প্রকাশক ও স্টলকর্মীদের।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানে আজকেও উড়ছে ধুলাবালি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, রোদের তীব্রতার জন্য পানি ছিটিয়েও কাজ হয়নি। এই বিষয়টি খুবই খারাপ লেগেছে। এবার থেকে রাতে ও সকালে সুযোগমতো পানি ছিটানো হবে।
মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান : অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে আজ মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৪টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আবুল মোমেনের লেখা প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সাহেদ মন্তাজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল কাশেম ও ফওজুল আজিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খুরশীদা বেগম।
প্রাবন্ধিক বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদে খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদন উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে দেশের চারটি মৌলিক আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের অধিবেশনে তিনি এ সংবিধানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে নির্দেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অর্থাৎ এটির মূল ভাবধারাকে স্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তিনি। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সংবিধান বিলের ওপর দীর্ঘ ভাষণেও তিনি এর মূল চার স্তম্ভের কথা আবেগ দিয়ে আবারও বলেছেন। এইভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন এক ব্যক্তি থেকে জাতির অন্তরে সঞ্চারিত হয়েছে, স্বপ্ন একদিন আকাঙ্ক্ষায় রূপ নিয়েছিল, তারপর তা হয়েছে অঙ্গীকার এবং শেষে ধরা দিয়েছে বাস্তবে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে তা রূপ পেয়েছে বাস্তব স্বাধীন দেশে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক অযথা বিতর্কের জন্ম দেওয়া হয়েছে, এ সম্পর্কিত ইতিহাসকে রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বাধীনতার রূপকল্প একাত্তরের বহু আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূত্রগুলো এদেশের জনগণের কাছে উপস্থাপন করে, তাদের আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নির্মাণ-কল্পনা প্রকাশ করেন, যা যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতা সংহত করার প্রেরণা দিয়ে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খুরশীদা বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এক ও অভিন্ন। বাংলা ও বাঙালির নেতা হিসেবে বস্তুত তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অধিকার সংরক্ষণ করতেন এবং তাঁর ঘোষণাতেই স্বাধীনতার সংগ্রাম আনুষ্ঠানিক রূপ পায়।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আবদুস সেলিম, শাহেদ কায়েস ও আঁখি হক।
কালকের অনুষ্ঠানসূচি : আগামীকাল রোববার অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টা বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী।