জ্বর ও নজর
৬৫
ব্যথাটা কি আকাঙ্ক্ষার? স্থির নাকি বহমান দেহে?
উৎস বলে দাও, দেখি প্রশমন সূত্র জানি কিনা!
সীমানার দূরে থাকলে উপলব্ধি করা যায় বেশি
কাছে গেলে ভুলে যাই, আরও কত বাকি জীবনের!
৬৬
অতিক্রম করে যাই, এক পথ থেকে ভিন্ন পথে
মারাত্মক ভুলগুলো মোচনীয় নয় জেনে ভুলি
সূর্যাস্ত ও সূর্যালোকে চিত্র এক রূপের দ্বৈততা
বিষয়ে কুয়াশাভাব, তবুও স্পষ্ট পৃথক দেয়াল!
৬৭
দূরাগত শব্দে বলি সীমাবদ্ধ আমার আশ্রয়
তোমারে কোথায় রাখি? দোলাচলে অসহায় মন
উড়ন্ত পাখিরা জানে সেও ঘরে যাবে সন্ধ্যা শেষে
ঘরের ঠিকানা নিয়ে কবে গিয়ে বলি আলিঙ্গনে এসো!
৬৮
মাঝে মাঝে মনে হয় একা আছি অজ্ঞাত অরণ্যে
চারিধারে বৃক্ষ, পক্ষী। আশেপাশে পাই পুষ্পঘ্রাণ
বেকুব বাতাস আনে নির্বাচিত বেদনার ফর্দ...
কারও কারও মুখ ভাসে নাম মনে পড়ে না মোটেই!
৬৯
আবাস অসহ্য হলে কোন আস্তানায় যেতে চাও?
মূলত পাখির মন তবুও বুকে আছে সুতো টান!
শেষ সুতো ছিঁড়ে গেলে উড়ে যায় সীমানা পেরিয়ে
চেনা পথ চেনা নদী হয়ে যায় একদা অতীত...
৭০
ছায়ামুখ ফিরে আসে। ডাক, নাম, মনে পড়ে শুধু
ক’টা দিন কাছে থাকো, হুলুস্থুলে কেটে যাক ক্ষণ
দেহের গভীরে মূল প্রসারিত মায়া-প্রীতি শাখা
উঠোনে দাঁড়ালে দেখি, রোদ সরে গেছে শূন্যপথে!
৭১
আয়ত্তের বাইরে গেলে মনে হয় কেন্দ্রচ্যুত কণা
কক্ষপথ ভুলে গেছে, শূন্যতায় ভেসে কত দূর?
পরিচিত বিকর্ষণ দূরে ঠেলে ফেলে দেয় পথে
খড়কুটো কই পাই? জবুথবু মাকড়সার জাল!
৭২
পাহাড়ের মায়া বেশি সমুদ্রের ঢেউজুড়ে মায়া;
মায়াসেতু পায়ে হেঁটে অনেকে সন্ধানে যায় রোজ
মনের খোরাক কভু, পরম জ্বালাও কারও কারও;
বৈপরীত্যে কেটে যায়, বিছানায় অগোছালো বেলা!
৭৩
বনের ভেতরে যাব উৎসব সমাপ্ত হলে ফের
কথোপকথনে জানব কোন লগ্নে বৃক্ষের আনন্দ?
সরল সংলগ্নে আমি বৃক্ষসখা প্রকাশ্যে আদিম
যদি আসো আগন্তুক শিখে নাও অরণ্য-আচার!
৭৪
দায়িত্বের যাঁতাকলে অস্থিরতা ভরা মনে থামি;
একান্ত ভুবনে শান্তি, নিজস্ব অভ্যাসে জানা সব!
অশ্রুকণা বলে দেয় নজরের ঘাটে ভালোবাসা
যাত্রী ওঠানামা করে যাত্রাপথ শেষ নেই তবুও...
৭৫
শরীরে তাপের ঘ্রাণ, জ্বর বুঝি? টের পাও নাকি?
ভয়ার্ত কোভিডকালে মিটারের উঁচু দাগে ভয়!
গভীর বিশ্বাসে বলি, ভালোবাসা অনির্বাণ শিখা
তাপ বেড়ে গেলে বুঝে নিতে হয় জোয়ার আভাস!
৭৬
সুবিধামতো একবার এসো বনে সবুজে ভাসাব
পাহাড়ে জ্যোৎস্না দেখবে? নাগরিক আকাঙ্ক্ষা দমাও।
প্রাণের সারল্য চাও প্রজাপতি ফড়িং মন পাশে
ঝিঁঝির মাতাল ডাকে ঢুকে যাব নজর গভীরে...
৭৭
পাহাড় সম্পর্ক রাখে নদীজলে সমুদ্রের টান
মোহনা সমাপ্ত হলে অবশেষে হারায় ঠিকানা
যতটা সংযুক্ত থাকে ততটা আগের ভালোবাসা
নতুন জগৎজুড়ে যুক্ত হয় হাসি কান্না গান...
৭৮
উদ্ভাসিত জবালালে বিকশিত হাসির প্রাবল্য
প্রজাপতি উড়ে যায়,অন্তঃস্থ আনন্দ দেখি চোখে
স্কোয়ার ফুটের বাসা প্রলেপ লাগানো জনাধার
তোমার আকাঙ্ক্ষা জানি মায়াবদ্ধ অরণ্য কুটির
৭৯
সময় সুন্দর মানে আয়োজনে উপলক্ষ আমি
উপভোগ করে নিই, পরবর্তী গন্তব্য অচিন
জানি সরে যেতে হয়, তার আগে ছবি তুলে রাখি
অসময়ে কাজে দেবে; বলা যাবে আলোতে ছিলাম!
৮০
কবিতায় লিখে রাখি প্রকৃতপক্ষে উদ্ভূত ক্ষণ
সংযোগরেখায় তুমি, মনোবার্তা বলে দেয় কথা
আন্দাজে অনেকে বোঝে, তুমি জানো প্রকৃত ঘটনা
আমার মুহূর্তভাব মূর্ত হয় উৎকীর্ণ পাঁজরে...
৮১
অরণ্যে এসেছি আমি অনিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে;
বুঝেছি বৃক্ষের তাতে কিছু যায় আসে না মোটেও!
কাছে যারা টেনে রাখে তারা সরে যায় না কখনও
মন চাইলে চলে যাব স্বঘোষিত আগন্তুক আমি!
৮২
জুয়াখেলা কাকে বলে জীবনের জোয়ারে বুঝিনি!
বিকেলে ভাটার টানে দিশেহারা নির্মিত অস্তিত্ব
ভেবেছি অনেকবার স্থির হয়ে বসে থাকব ঘরে
ক্রমাগত দৌড় বেগে হারাই একান্ত অনুভব!
৮৩
কেন্দ্রীভূত চিন্তা নিয়ে নিয়মিত আবর্তনে থাকি
বারংবার যাত্রা এক ঘুরেফিরে একটাই সড়ক
প্রতিটি নতুন দিনে উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষত
পেছনেই ভার বেশি, চাইলে সামনে যাওয়া যায় নাকি?
৮৪
বেদনা-বদ্বীপ যেন চারদিকে জল আর ঢেউ
ঘূর্ণিঝড় এলে বুঝি কতটা আঘাত লাগে গায়ে!
রাতের নক্ষত্র জানে কত দুঃখ জমা আছে বুকে
বেদনা উড়িয়ে বলি ক’টা দিন থাকি তোর সাথে...
৮৫
তোমাকে ছুঁয়েছি আমি স্পর্শবীজ আছে স্নায়ু-রক্তে
নইলে মনে পড়ে কেন? মুখ ভাসে দরজার পাশে!
একদিন হারাব সব আমিসহ আমার বীজদানা
মনে পড়লে বুঝে নিও তোমাকে ছাড়িনি আমি কভু...