নেলসনের পাঁচটি কবিতা
উদয় কিংবা অস্তদৃশ্য
অথচ এমন দৃশ্যের খোঁজ পায়নি কখনো কেউ
মাথার উপরে ঘুড়ির উড়াল, পায়ের তলাতে ঢেউ
একা একা ভাঙে, ভাঙতেই থাকে, বালুর মতন রোদ
যেন কোনো এক দেউলে বণিক দিচ্ছে ঋণের শোধ
অথবা এমন ভ্রান্তির নিচে বয়স ঘুরছে একা
নিমগ্ন কাক সেখানেই বসে নিচ্ছিল মাপজোখ
অথচ তারও ডানা ভেঙে আছে উপসম নেই যার
মৃত্যুর দিকে তখনো তাকিয়ে গ্রন্থিত উদ্যোগ।
হয়তো সেখানে ছায়া জমে নাই, জমে না ঘামের দিঘি
হয়তো সেখানে এমনিই সব আকালের মতো লাগে
জীবন বিষয়ে ঠাকুরেপনার সমাপন হয়ে আছে
হয়তো কিছু না, সব হয়ে আছে, না হওয়ারই ধাঁচে।
কন্সট্রাকশনদৃশ্য
আনত রোদের রেখা ঘনাচ্ছে চারপাশে আর
মেঘেরও ছায়ার মতো ছড়াচ্ছে মানুষ-বাজার
এখানে ঘুরছি আমি ঘাতকের ছদ্মবেশে
তাড়াখাওয়া ফড়িং যেমন কপালের মধ্যে বসে।
চেয়ে থাকা সঙ্গত না আহত পথের দিকে
সার্কাসে কে কবে বল, বলেছে ধ্যাত্যিরিকে
সেহেতু লোক শোনে না, গায়ে গায় গা ঘেষিয়ে
পথগুলো হা করে খায়, কিছুটা বিষ মিশিয়ে।
চেয়ে দেখ ঊন-নয়নে, ব্যানারে তন্ত্র হাসে
কতটা মিল হলো যে আধুনিক যন্ত্র-ঘাসে।
নজরদারি
ধীরে বইছে বাতাস
জনি প্রিন্ট শাড়ি মৃদু দুললে যেমন।
গলি একবারে চুপ
ধুলা উড়ছে কেবল কোনো শব্দ ছাড়াই
সিটি বাজল হঠাৎ
কে? প্রেশার কুকার।
এতে চমকে উঠেই
পাতা খুলল দেরাজ।
আলো হাঁটছে একাই
গলি-ঘুপচি পথের চেনা বুকের ওপর
যেন একজোড়া চোখ করে যাচ্ছে জরিপ—
‘এ কি শব্দ শুধুই, না দ্রোহেরই প্রতীক?’
এ দৃশ্য থেকেই, শুরু নজরদারির।
ফেরার আগে
চলে দিন চলে, নামে রাত নামে। দামে ঘুম কিনি
দামে ধূম টানি। জানি এখানেই, জানি দরজাতে
কড়া মাঝরাতে থাকে গজরাতে। সে তো থামবে না।
যদি ভোর আসে, আলো ঘুম জাগে, তবু রাত থাকে
থাকে ঘোর কালো, থাকে নিশ্বাসে, ভাঙা পাঁজরাতে।
যেন আর কিছু চেনা নেই কিছু, যেন পথটা এ
ঘোর সন্ধ্যাতে মিশে স্থির হয়ে বসে দম টানে।
যেন চোখ দুটো খোলা ডাস্টবিনে থাকে ঝিম মেরে
চেয়ে একটানা গোনে ভাতদানা ঘেঁটে ভুল কথা।
জানি এই থাকা তবু জাগবে না, চেনা সুর গানে
যদি কেউ থাকে ঘোরা ঘোর থেকে দূরে চোখ পেতে,
যদি ভুল করে চেয়ে কেউ থাকে ভাঙা দরজাতে—
আশা এই নিয়ে ফেরা যায় তবু কালো পথ দিয়ে।
আশা বাঁচবে কি শত ঠগ ভরা নিয়নের নিচে?
সে কি জাগবে এ পোড়ো কালরাতে বসে দরজাতে?
আমার ফড়িং তার আকাশে বোমারু হয়ে ওড়ে
শিশুটির পাশে শুয়ে শেষে আমি শিশুটির মতো ভাবি। হাওয়াই মিঠাইয়ের ঘোড়াটির মতো দিকহীন হয়ে ছুটি। মুঠোয় বন্দি একটা শহর, পুতুল বা পিস্তল। হলদে আলোয় জমা হয় রোজ কালো-পঁচা এঁদো জল। সে জলের ওপর যত্নে নামাই রং করা নৌকা। পাল-গুণহীন সোনায় মোড়ানো সে নৌকার পাটাতন। মাঝিটা উধাও, মাঝিটা ভীষণ, নিয়ে গেছে বৈঠা।
শিশুটির সাথে শুয়ে শুয়ে আমি শিশুর ঘুমেই ঘুরি। আকাশটা আমার, আকাশে কেবল উড়বে আমার ঘুড়ি। বোঁ-ঘুড়ি রোজ চিল হয়ে উড়ে আমার গাছেই শেষে, প্লেনের মতন করবে দারুণ সহজ অবতরণ। তার পাহারায় সারা রাতজুড়ে জেগে রবে ওই সত্যি পেঁচার দল, যেন ও ঘুড়ি আয়াসে ঘুমায় চিলের মুখোশ খুলে। রাত ফুরালেই চড়াই হয়ে সে নামাবে নতুন ভোর।
শিশুটির হাতে আঙুল জড়িয়ে কংক্রিট গুনে চলি। শিশুটির ক্ষোভ দেয়ালে প্রোথিত, সেদিকে এড়িয়ে বলি—মাঠের গল্প, ঘাটের গল্প, নদীর বিজন ঢেউ। তার গায়ে কিছু কামরাঙা রং যত্নে মেখেছে কেউ। কামরাঙা রং সবুজ অথচ শিশুটি দেখেছে লাল। সুরকির টানে, সবুজ বিগত, শিশুটির কাটা গাল। শিশুটির চোখ বিমূঢ় বড়, আমার গল্পের তোড়ে। শিশুটি জাপটে আমার আস্তিন, শিশুটি পাথর খোঁড়ে। শিশুটির ঘুম, ভোর ও খোয়াব চিরে আমার ফড়িং তার আকাশে বোমারু হয়ে ওড়ে।