বীরেন মুখার্জীর কবিতা
যদি মানুষই না থাকে আর
বিষণ্ণ চিতায় চেপে এসেছে এ মৃত্যুগন্ধা দিন
তবুও তুমুল স্পৃহা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ
কখনও তেজী রোদ কাঁধে নিয়ে সামনে হাঁটছে
তারপরও তোমার দেখা মিলছে না রাজশ্রী?
রাজশ্রী, তোমার জন্য মানুষের এত হাহাকার
মানুষ কি তোমার চোখে মুছে যাওয়া স্মৃতিরেণু?
আমার সমস্ত মঙ্গলবার বিছানো পথে—
একটু একটু করে জমাট বাঁধছে অর্বাচীন আঁধার
নিয়ত নীলছোবলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিপুলা পৃথিবী
বলো, কার পাপে ও তাপে মেতেছে এই স্বয়ম্বরা?
রাজশ্রী, কী হবে প্রকৃতির এ নন্দন-উপাচার
মানুষের পৃথিবীতে মানুষই যদি না থাকে আর!
বসন্ত বাতাস
(উৎসর্গ : যে তুমি চঞ্চলমতি)
সৃজন ও মহিমায় দেখি যতবার, ফুটে ওঠো;
তুমি এক নৈঃশব্দ্যবিম্বিত রাত, সমূহ রক্তিম!
পুষ্পের সমারোহে আন্দোলিত জলধি; যেন—
জীবনের পদ্মে বসে থাকা সোনালি তিতির!
তোমাকে জ্যোৎস্না ভাবে ঘুমন্ত রাতের পাখি
বুনোফুল সুঘ্রাণ উন্মুক্ত করে কাছে ডাকে
তোমার নামে বদলে গেলে জাগতিক ভাষা
যাপনও হয়ে ওঠে রূপান্তরকামী মিত্র এক।
এভাবেই, সময়ের ব্যঞ্জনা পেরিয়ে হয়ে ওঠো
অজর অমেয় গীতি, শূন্য বুকে বসন্ত বাতাস!
অব্যক্ত ক্ষরণ বুকে
আমার সমূহ দুর্বলতা যখন দূরারোগ্য, তখন
শুশ্রূষা পেতে হাত বাড়িয়েছি, চন্দ্রাহত নক্ষত্র
আমাকে নিয়েছে টেনে অতল গহ্বরে তার;
সেখানে সকল নির্মিতি আছড়ে পড়েছে ভাষাহীন!
হায় যোদ্ধা! হায় প্রাকবসন্তের শীতজর্জর প্রহর!
দেখো, অব্যক্ত ক্ষরণ বুকে ভেসে যাচ্ছে মাঘের শহর।
তোমার দীঘল চুল
মাঘের কোকিল, রাত্রিমর্মে জানিয়ে দিয়েছে
তোমার দীঘল চুলে জমে আছে কত মধু!
আমার দিনমান মুখর তারই সুঘ্রাণে;
নিশ্চিত, এই কেশোদ্যানে ফুটলে বসন্ত গোলাপ
সযত্নে লেখা হয়ে যাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা...
বাকিসব রাধা
বসন্তের ঘোর; আপন মনে রেখেছে খুলে
নিজেরই ঘরদোর, মেলেছে খানিক মায়া,
দু’বেণী চুলের ঘ্রাণ, খেপাটে অরণ্যদল;
আবাহন জানি, তবু যেন কাণ্ডজ্ঞানহীন!
চারিপাশে রঙিন উচ্ছ্বাস, দৃশ্য দেখে বুঝি
মিত্র, হয়তো ঘাতক তুমি, বাকিসব রাধা...