ভানুসিংহ অনুপ্রাণিত 'রাই-কৃষ্ণ পদাবলি'
কৈশোর ও প্রথম যৌবনের রবীন্দ্রনাথ; নোবেলজয়ী বিশ্বকবি হওয়ার প্রথম স্মারক রেখেছিলেন 'ভানুসিংহ' ছদ্মনাম ধারণ করে। রাধা-কৃষ্ণের লীলা নিয়ে মধ্যযুগের কবিদের রচিত বৈষ্ণব পদাবলির অনুকরণে রচেছিলেন ভানুসিংহের পদাবলি। রবীন্দ্রনাথের কবি-জীবনের প্রথমার্ধে রচিত ব্রজবুলি ভাষার এই কবিতাগুলর অনুপ্রেরণাতেই তাঁর জয়ন্তীতে আয়োজিত হলো 'রাই কৃষ্ণ পদাবলি'। শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই গীতিনাট্যের রচনাকার কবি শেখ হাফিজুর রহমান। সামগ্রিক ভাবনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য।
গীতিনাট্যটি রচিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে যখন বৃন্দাবনে ঘনিয়েছে বিরহের ছায়া। নিকট হয়েছে কৃষ্ণের মথুরা গমনের কাল। রাধা সহসা পায় না কৃষ্ণ-দর্শন। সুহৃদ সুবল, বৃন্দাবনের গোপীরাও পায় না কালার হদিস। কৃষ্ণ বিরহে রাধার আকুলতার মধ্যেই বেজে ওঠে মথুরার নতুন রাজা হতে চলা 'মাধবের' রথ-ধ্বনি। এদিকে শেষবারের মতো মথুরায় চলে যাওয়ার আগে কৃষ্ণও ব্যাকুল হন রাধা-মিলনের জন্য। কিন্তু অভিমানিনী রাধার মানও সহজে ভাঙার নয়। অতঃপর রূপের প্রশংসায়, মায়ার আস্তরণে, সখা-সখীদের দিয়ে রাস আয়োজন করে রাইয়ের মানভঞ্জন করেন কৃষ্ণ। অপার স্বর্গীয় শুদ্ধতা, শ্রদ্ধা ও প্রেম-মগ্নতায় রাধা নিজেকে সমর্পণ করেন কৃষ্ণের কাছে। নেচে-গেয়ে ব্যক্ত করেন মিলনের আনন্দের কথা। পরস্পরের সাথে পূনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষার কথা। নৃত্যরত অবস্থায় রাধা-কৃষ্ণের স্বর্ণালি ও কৃষ্ণ বর্ণ যেন একীভূত হয়ে যাচ্ছিল আদি-অন্তহীন যুগল মূর্তির মতো। তাঁরা যেন ঘটাচ্ছিলেন পরম পবিত্র ও মৃত্যুহীন প্রেমের অনিন্দ্য প্রকাশ।
রাধা-কৃষ্ণের বিরহ ও মিলনকেন্দ্রিক এই পালায় সরব উপস্থিতি ছিল রবীন্দ্রনাথের। পরিবেশিত হয় 'শ্যাম রে নিপট কঠিন মন তোর', 'বাদরবরখন নীরদগরজন'সহ ভানুসিংহ পদাবলির কয়েকটি গান। সঙ্গীত তত্ত্বাবধানে ছিলেন হৈমন্তী শুক্লা। পরিচালনা করেছেন রত্না চৌধুরি। কণ্ঠ দিয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, মনমন ভট্টাচার্য প্রমুখ। গীতিনাট্যের ধারা বর্ণণা করেছেন উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃত্যাংশে রাই ও কৃষ্ণের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের নন্দিত দুই নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাই-কৃষ্ণ পদাবলির আগে কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার অনুপ্রেরণায় অনুষ্ঠিত হয় 'চির উন্নত মম শির' শিরোনামের নৃত্যানুষ্ঠান। পরিবেশনা করেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত থেকে আগত নৃত্যশিল্পী প্রসূন ব্যানার্জি এবং তাঁর দুই ছাত্রী সুমনা কান্দের ও স্নেহা দাস।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ। সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।