বাংলা একাডেমিতে শহীদুল্লাহ্ স্মরণ
বাংলা একাডেমিতে আজ ১৩ জুলাই ২০১৫, সোমবার, বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গবেষক, বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
সকাল ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চু, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, লেখক ড. ফজলুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
স্বাগত বক্তব্যে মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষা ও সহিত্যের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম। বাংলা একাডেমির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এই প্রতিষ্ঠানের সূচনাপর্ব থেকে। তাঁর স্মরণে বাংলা একাডেমিতে স্থাপিত হয়েছে শহীদুল্লাহ্ গবেষণা কক্ষ। এ ছাড়া একাডেমি তাঁর রচনাবলি প্রকাশ করেছে এবং অতিসম্প্রতি শহীদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থ পুনর্মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
একক বক্তা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এক মনীষাদীপ্ত মহাজীবনের নাম। তাঁর ধার্মিকতা প্রগতিশীলতার সঙ্গে বিরোধ হয়ে দাঁড়ায়নি। বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তিনি বাংলা ভাষার ব্যুৎপত্তি থেকে বৌদ্ধগানের ভাষা পর্যন্ত বিচিত্র ভাষাতাত্ত্বিক বিষয়ে অনুপুঙ্খ গবেষণা করেছেন। মাতৃভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগ তাঁকে যেমন বাংলা ভাষার উদ্ভব-বিকাশ নিয়ে গবেষণায় প্রাণিত করেছে তেমনি সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষার প্রচলনের পক্ষে লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, বাংলা ও ইংরেজিতে লিখিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধগুলো বাংলা একাডেমি থেকে সংকলিত হয়ে প্রকাশ হওয়া জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা ভাষার উৎপত্তি-বাংলা ভাষায় অনার্য প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ধারণা ছিল মৌলিক। তিনি শুধু বাংলা ভাষা বিষয়ে নয়, একই সঙ্গে সিংহলি ভাষার উদ্ভব নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এবং আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। অসামান্য বিদ্যাবত্তা ও পাণ্ডিত্যের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্বে যুক্ত হয়েছিল রসবোধ, সারল্য ও নীতিনিষ্ঠা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক এবং বাঙালি জাতি তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।