রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খুলে দেওয়ার দাবি তরুণ লেখক সমাজের
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের তরুণ লেখকসমাজ। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশের অভিযোগে বইমেলায় রোদেলার মতো খ্যাতনামা একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল এভাবে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে, একজন ইরানি লেখকের এই বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না, সরল বিশ্বাসেই তিনি অন্যান্য সব অনুবাদগ্রন্থের মতো করেই এটি প্রকাশ করেছেন, কারো অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় তাঁর ছিল না। এতদসত্ত্বেও কারো কারো আপত্তি ও হুমকির মুখে তিনি বইটির প্রকাশনা বাতিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এরপরও গ্রন্থমেলায় রোদেলার স্টল বন্ধ করে রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। বাংলা একাডেমি কোনো লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্টল বন্ধ করেনি, বইটি পড়ে দেখারও প্রয়োজনও বোধ করেনি, শুধু তাদের হুমকির মুখে একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রকাশনীটির স্টল বন্ধ করে দিয়েছে। মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতার জন্য একাডেমির এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের হুমকি।
তাদের দাবি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবং প্রকাশকদের সংগঠন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি অবিলম্বে রোদেলার স্টল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের অনেক প্রবীণ-নবীন লেখকের বই বেরিয়েছে। স্টল বন্ধ করে দেওয়ায় শুধু প্রকাশক নন, লেখকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হুমকির মুখে স্টল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ দেশের কোনো প্রকাশক ভবিষ্যতে মুক্তচিন্তার কোনো বই প্রকাশ করার সাহস পাবেন না। তাঁদের ভেতর একটা ভয় কাজ করবে, স্টল বন্ধ হওয়ার ভয়। অনাগত দিনে তাঁরা নতজানু হয়ে থাকবে। তাতে মুক্তচিন্তার দরজা এ দেশে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁরা আশা করেন বাংলা একাডেমি এমন একটা ক্ষতি করবে না। তাঁরা রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খোলা দেখতে চান। জ্ঞানগৃহ উন্মুক্ত চান।
তরুণ লেখক সমাজের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রাবন্ধিক আজফার হোসেন, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক কল্লোল মোস্তফা, প্রাবন্ধিক জব্বার হোসেন, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি জুয়েল মাজহার, কবি জাহেদ সরওয়ার, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, কবি সৈয়দ তারিক, কবি মাসুদ পথিক, প্রাবন্ধিক সালেক খোকন, কবি তুষার কবির, কবি মাইনুল শাহিদ, প্রাবন্ধিক বিধান রিবেরু, কবি জাহানারা পারভীন, কবি নওশাদ জামিল, কবি অঞ্জন আচার্য, কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন, কবি রাহেল রাজিব, কবি সাইয়েদ জামিল, কবি শোয়েব সর্বনাম, কবি রিসি দলাই, কবি ফকির ইলিয়াস, কবি বীরেন মুখার্জি, কবি আনোয়ার কামাল, গল্পকার মোজাফফর হোসেন, গল্পকার হামীম কামাল, গল্পকার রাজিউল হাসান, গল্পকার মেহেদি হাসান, কবি দেবজ্যোতি ভক্ত, সুদীপ বাঙালি, তানভীর আহসান, কাসিফুর রহমান, সানজিদা হক মিশু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ইরানের বিখ্যাত লেখক আলী দস্তির ‘টোয়েন্টি থ্রি ইয়ার্স: আ স্টাডি অব দ্য প্রোফেটিক ক্যারিয়ার অব মোহাম্মদ’বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে রোদেলা প্রকাশনী। বইটি ভাষান্তর করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী। বইটি প্রকাশের অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনীর ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে একটি হ্যাকার গ্রুপ। রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান তাৎক্ষণিকভাবে বইটি তাঁর বইমেলার স্টল এবং বাংলাবাজারের অফিস থেকে সরিয়ে নেন এবং বইটির প্রকাশনা বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি সবিনয়ে স্বীকার করেন, ‘বইটিতে নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে কোনো কথা থাকতে পারে- এমনটি আমার ধারণায় ছিল না। যেহেতু ভুল করেছি, তাই অপরাধ স্বীকার করে আমি বইটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ তবু বাংলাবাজারে রোদেলার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।