না-হতে পারার অনুভবও নেই : নবকুমার বসু
পশ্চিমবঙ্গের প্রথিতযশা সাহিত্যিক নবকুমার বসু। জন্ম : ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ বসু তাঁর বাবা। চূড়ান্ত অভাবের মধ্যে কেটেছে তাঁর শৈশব ও বাল্যকাল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর শল্যচিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৯৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডে প্রবাসী হন। ‘দেশ’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ছোটগল্প প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। বাবা সমরেশ বসু এবং মা গৌরী বসুর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তাঁর ‘চিরসখা’ নামে তিন খণ্ডের দীর্ঘ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বিদেশে বাংলা ভাষার প্রসারে সদা উৎসাহী তিনি। অজস্র ছোটগল্প ছাড়াও লিখেছেন ভ্রমণ ও রহস্য কাহিনী, বেশ কিছু উপন্যাস। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : চিরসখা, আছে সে নয়নতারায়, শ্রীময়ী মা, সুধাবিষে মিশে, লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, হিয়া পরবাস, পুনর্বাসন, পঞ্চাশটি গল্প প্রভৃতি।
যে বই বারবার পড়ি
গীতবিতান।
যে বই পড়ব বলে রেখে দিয়েছি
আলাদা করে কিছুই তুলে রাখিনি।
যে চলচ্চিত্র দাগ কেটে আছে মনে
ডেভিড লিনের ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’।
যে গান গুনগুন করে গাই
নিভৃত প্রাণের দেবতা যেখানে জাগেন একা...।
প্রিয় যে কবিতার পঙ্ক্তি মনে পড়ে মাঝেমধ্যে
দুলিতেছে তরী ফুলিতেছে জল ভুলিতেছে মাঝি পথ...।
খ্যাতিমান যে মানুষটি আমার বড় প্রিয়
শম্ভু মিত্র।
যে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
তেমন কোনো ফুলের কথা মনে পড়ে না।
যা খেতে ভালোবাসি খুব
যাবতীয় সুখাদ্য। বিশেষ করে হিমসাগর আম ও লুচি।
যা সহ্য করতে পারি না একেবারেই
হিপোক্রিসি।
জীবনে যার কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী
মা গৌরী বসু।
যেমন নারী আমার পছন্দ
বুদ্ধিদীপ্ত এবং ঠিকমতো নিজেকে সাজাতে জানে।
যেখানে যেতে ইচ্ছে করে
দক্ষিণ আফ্রিকা।
যেভাবে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভালো লাগে
বাংলা হাতের লেখা প্র্যাকটিস করে।
যে স্বপ্নটি দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে
প্রবাসের বাড়িতে কেউ টেলিফোন করে একটা বড় পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর জানাবে।
যে কারণে আমি লিখি
যাতে একসঙ্গে নিজের এবং অন্যদের আনন্দের কারণ হওয়া যায়।
নিজের যে বইটির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে
চিরসখা।
ভালোবাসা মানে আমার কাছে...
ভালোতে বাস করা।
আমার চোখে আমার ভুল
সবই তো ভুলেই ভরা, আলাদা করে কোনটা বলব!
জীবনে যা এখনো হয়নি পাওয়া
যা পেয়েছি যথেষ্ট। নেতিবাচক ভাবনা তেমন আসে না।
যে স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে
মা ও বাবার মৃত্যুপূর্ব স্মৃতি। চিকিৎসক বলেই সেই দৃশ্য আমার স্মৃতিতে বারবার ঘুরে আসে এবং তা কষ্টের।
যা হতে চেয়েছিলাম, পারিনি
কী যে ঠিক হতে চেয়েছিলাম, তা কি ছাই জানি! সুতরাং না-হতে পারার অনুভবও নেই।
জীবনের এ-প্রান্তে এসে যতটা সফল মনে হয় নিজেকে
সাফল্য ও তার অনুভূতি বড় আপেক্ষিক ব্যাপার। আমার নিজের হিসেবে ভাবি, আমি তো বেশ সফল মানুষ-ই!
কোনটা ভালো লাগে—পাহাড় নাকি সমুদ্র?
আমি বড় প্রকৃতিমুগ্ধ মানুষ, সুতরাং পাহাড়-সমুদ্র সবই।
কোনটা বেশি টানে—বর্ষার বৃষ্টি নাকি শরতের নীল আকাশ?
আগের প্রশ্নের উত্তরের মতোই ষষ্ঠঋতুই বড় প্রিয়। তা সত্ত্বেও একটু পক্ষপাতিত্ব টের পাই নীল আকাশের প্রতি।