মুক্তির উৎসবে সোভিয়েত বন্ধুদের শ্রদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে মাইন পুতে রেখে বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক হাজার ৩০০ সদস্যের একটি চৌকশ নৌকমান্ডো বাহিনী ১৯৭২-৭৪ সময়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ডিমাইনিং অপারেশনে অংশ নেয়। এ সময় বেশ কিছু সোভিয়েত নৌসেনা আহত ও নিহত হন।
১৯৭১ সালে জাতিসংঘে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আনীত প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরীক্ষিত বন্ধুতে পরিণত হয়।
সেই পরম বন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধ উৎসব-২০১৫ থিমকান্ট্রি রুশ ফেডারেশন (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)’ অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের উৎসব তাই রুশ জনগণ, সরকার ও নৌসেনাদের উৎসর্গ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকাস্থ রুশ ফেডারেশন দূতাবাস, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং সাউথ এশিয়ান মিউজিক ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। বিপদের দিনের এই বন্ধুকে দীর্ঘদিন ভুলে ছিলাম। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ক জোরালো করার।’
সভাপতির ভাষণে মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ২০ বছর আগে যাত্রা শুরু করে প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজন করে আসছে এবং মুক্তিযুদ্ধ উৎসব আয়োজনে পাঁচটি জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হয়ে উৎসবের মর্যাদা ও গৌরব বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ রুশ ফেডারেশনের (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) উপরাষ্ট্রদূত ড. আনাতোলি দাভিদনকো এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের পরিচালক অ্যালেক্সজান্ডার পি ডেনিম এবং সাউথ এশিয়ান মিউজিক ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. শরীফ আশরাফউজ্জামান।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ফকির আলমগীর, শিল্পী শাহিন সামাদ, শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, শিল্পী তিমিত নন্দী ও শিল্পী শোমঋতা মল্লিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার গান গেয়ে দর্শকদের অভিভূত করেন।
উৎসবের সূচনা হয় বিকেল ৩টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের লবিতে বাংলাদেশের ‘মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আলোকচিত্র ও দলিলপত্র দিয়ে।
এতে মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ডিমাইনিং অপারেশনের ১৪৩টি আলোকচিত্র ও দলিলপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রদর্শনীটি আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।