কবিতা চেতনার কথা বলে : সৈয়দ শামসুল হক
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, কবিতা মানুষের চেতনার কথা বলে, স্বপ্নের কথা বলে, প্রত্যয়ের কথা বলে। সে স্বপ্ন, চেতনা ও প্রত্যয় যখন নানা আঘাতে বিদ্ধ হয় তখন তা জাগিয়ে তোলার জন্য, স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কবিদেরই প্রয়োজন হয়। যেমন হয়েছিল সেই ১৯৮৭ সালে।
আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে ‘জাতীয় কবিতা উৎসব-২০১৬’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে কবি এসব কথা বলেন। ‘কবিতা মৈত্রীর, কবিতা শান্তির’ স্লোগানকে সামনে রেখে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ।
এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আটটি দেশের প্রায় দুই শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন। আগামীকাল রাতে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসেছি কবিতার মৈত্রী স্থাপনের জন্য। এই উৎসব আমাদের একত্রিত করেনি, একত্রিত করেছে কবিতাই। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, চিন্তা-চেতনা, শব্দ-উপমা এক। এগুলোই আমাদের একত্রিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশ বারবার নানা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, নতুন প্রজন্মকে ভুল ইতিহাসের পাঠ দেওয়া হয়েছে, গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রের জাগরণ ঘটেছে, মৌলবাদের উথান ঘটেছে। যারা যুদ্ধাপরাধী তারা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আমাদের শাসন করার চেষ্টা করেছে। বুক থেকে অনেকখানি ভার কমে গেছে যখন দেখি যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছেন।’
উৎসবের সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আজ থেকে ২৯ বছর আগে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মন্ত্রে দীক্ষিত দেশের আপামর জনগণের আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে শৃঙ্খলমুক্তির ডাক দিয়ে আমরা এই কবিতা উৎসবের সূচনা করেছিলাম। কবিতার এই মিলনমেলা আজ সারা দুনিয়ায় নন্দিত। আমরা কবিরা প্রেমে-অপ্রেমে, ভালোবাসায়-অবহেলায়, রক্ত-মাংস-মজ্জা নিঃশেষ করে; জীবন-সংসার উড়িয়ে-পুড়িয়ে নীরবে-নিভৃতে কবিতা রচনা করি।’
এ সময় জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্বৈারচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের কবিরা বারবার প্রগতি, মৈত্রী ও শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু আমরা কবিরা তখন হতাশ হই যখন দেখি কামরুল হাসানের শাণিত রেখা যে সামরিক স্বৈরাচারীর মুখ আমাদেরকে চিনিয়ে গিয়েছিল আজও সেই পতিত স্বৈরাচার এই দেশে বড় গলায় কথা বলে।
অনুষ্ঠানের শুরুর আগে বিদেশ থেকে আগত কবিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সৈয়দ শামসুল হক। কবিতা উৎসবে আগত বিদেশি কবিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ভারতীয় কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়, সেবন্তী ঘোষ, আনসার উল হক, রাসবিহারী দত্ত ও মোহর চট্টোপাধ্যায়, সুইডিশ কবি লারস হেগার, বেনত বার্গ, নরওয়েজিয়ান কবি এরলিং কিতেনসেন, সোভাকিশ কবি মিলান রিচার, মরক্কোর কবি বেনাইসা বোমালা প্রমুখ।
এদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় মুক্ত আলোচনা পর্ব। এ ছাড়া দুপুরের পর থেকে শুরু হয় কবিতা পাঠ পর্ব, রাতে হবে আবৃত্তি পর্ব। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টা থেকে শুরু হবে ‘কবিতা মৈত্রীর কবিতা শান্তির’ শীর্ষক সেমিনার। এ ছাড়া দুপুরের পর থেকে শুরু হবে কবিতা পাঠ পর্ব। বিকেলে পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। রাতে দেশের সবচেয়ে বড় এ কবিতা উৎসবের ইতি টানা হবে।