তরুণ চিত্রশিল্পী সৌরভের ‘শাশ্বত অস্তিত্ব’
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে ‘শাশ্বত অস্তিত্ব’ শিরোনামে শুরু হয়েছে তরুণ চিত্রশিল্পী সৌরভ চৌধুরীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
বিগত ছয় বছরের ও অধিক সময় ধরে শিল্পী সৌরভ ‘সভ্যতা’ সিরিজ নিয়ে কাজ করছেন যা পৌরাণিক, কাল্পনিক ও লোকজ মোটিফের সংমিশ্রণে গুহাচিত্রের অবয়বে আধুনিক উপস্থাপনায় সমৃদ্ধ। কল্পরস বা ফ্যান্টাসিও আকর্ষণ করেছে সৌরভের শিল্পীমনকে। গরুর গায়ে জুড়েছেন তিনি পাখির ডানা, প্যাঁচার মুখে ফুটেছে মানুষী অভিব্যক্তি।
সৌরভের শিল্পকর্ম ‘শাশ্বত অস্তিত্ব’ হিসেবে অভিহিত হয়েছে। শিল্পী নিজেই এই শিরোনামায় তাঁর কাজ চেনাতে চেয়েছেন। তাঁর চিত্রের জমিন অবলোকন করার পর শিল্পপাঠে অভিজ্ঞ দর্শক প্রথমে যে বিষয়টি অনুভব করবেন তা শিল্পীর কব্জির জোর, মাধ্যমের প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।
উডকাট, রিলিফ প্রসেস, এচিং এসব ছাপচিত্রের মাধ্যমে কাজ করতে গেলে অন্য মাধ্যমের চেয়ে বেশি কারিগরি দক্ষতা আয়ত্ত করতে হয়। একটা কাঠখণ্ড বা একটা ধাতব পাত খোদিত করার সূচনা থেকে প্রিন্ট নেওয়া পর্যন্ত কেবলই বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন হয়। সৌরভের কাজে সেই মনোযোগ তাঁকে বিশেষ সুফল দিয়েছে।
ছাপচিত্রে গ্রাফিক্স- সিন্ধতা রং রেখার পারিপাট্য দ্রষ্টব্য হয়ে পড়ে। কুরি কুরি রেখার জাল, বিন্দুর বুনট, বর্ণ ছোপের হালকা ও গাঢ়তর প্রকাশের সহবস্থান এবং সর্বোপরি মোটিফের সঙ্গে ওই সব অনুষঙ্গের পারস্পরিক সম্পর্ক; শিল্পের এসব বিষয় স্থির মনোনিবেশে চিত্রায়িত করতে গিয়ে সৌরভ পারমিতার পরিচয় দিয়েছেন। ইমেজের এই বিরোধাভাসে বা সংযুক্তিতে শিল্পী প্রমাণ করতে চেয়েছেন চিররূপান্তরশীল মানুষের মন।
শিল্পী সৌরভ চৌধুরী ১৯৮৭ সালে রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভারসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগ থেকে ড্রইং ও পেইন্টিংয়ে বিএফএ ও এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইতিমধ্যে তাঁর কাজের প্রতিভায় বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন, যার ভেতর ২০১৫ সালে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ আয়োজিত শ্রেষ্ঠ তরুণ শিল্পী পুরস্কার অন্যতম। বর্তমানে শিল্পী সৌরভ চৌধুরী নির্বাহী শিল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কসমস আতেলিয়ার-৭১ ও গ্যালারি কসমসে কর্মরত আছেন।
প্রদর্শনীর ৩৫টি কাজের বেশির ভাগই ছাপচিত্র মাধ্যমের বিভিন্ন টেকনিকে করা, এ ছাড়া শিল্পীর দুটি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
গত ২২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাপরিচালক রূপালী চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্যালারি কসমসের পরিচালক তেহমিনা এনায়েত, বরেণ্য চিত্রশিল্পী বীরেন সোম ও প্রথ্যাত শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ।
প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৯ মে পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।