বিশ্বসেরা ১০০ বই
টমাস মানের ‘বাডেনব্রুকস’
১৯০১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল জার্মান লেখক টমাস মানের উপন্যাস ‘বাডেনব্রুকস’। উত্তর জার্মানির এক ধনাঢ্য পরিবারের চার পুরুষের গল্প এই উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে।
ঔপন্যাসিক মানের পরিবার বাস করত জার্মানির লুবেকে। মান মূলত নিজের পরিবারের আলোকেই এ উপন্যাসের গল্পটি সাজিয়েছেন। এটা ছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসটি যখন প্রকাশিত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। বইটি প্রকাশিত হওয়ার মাত্র দুই বছর পরেই ১৯০৩ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
১৯২৯ সালে ‘বাডেনব্রুকস’ বইটির জন্যই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন টমাস মান। সুইডিশ একাডেমি তাদের ঘোষণায় উল্লেখ করেছিল, মানের অন্যতম সেরা উপন্যাস ‘বাডেনব্রুকস’-এর জন্যই তাঁকে এ পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার মনে করা হয়েছে।
১৮৯৭ সালে ‘বাডেনব্রুকস’ লেখা শুরু করেছিলেন মান। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। তিন বছর পর ১৯০০ সালের জুলাইয়ে উপন্যাসটি লেখা শেষ করেন মান। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালের অক্টোবরে। মানের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ী ও শিল্পীদের জগতের মধ্যে যে সাংঘর্ষিক অবস্থা বিদ্যমান, তা নিয়ে লেখা। বিংশ শতাব্দীর বাস্তববাদী ঢঙে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসটি লেখার আগে বেশ কিছু ছোটগল্প লিখেছিলেন মান।
কাহিনী সংক্ষেপ
১৮৭৫ সালের ঘটনা। বাডেনব্রুক পরিবার তখন উন্নতির শিখরে উঠছে। চারদিকে পরিবারটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের দেখভালের মূল দায়িত্ব পালন করেন জোহান। পরবর্তীকালে জোহানের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ ও ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পায় তার বড় ছেলে জ্যঁ। বাবার পর বাডেনব্রুক পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। জ্যঁয়ের মেয়ে অ্যান্তোনি বা টনি।
ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে টনি। তরুণী টনিকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেয় হার গ্রুনলিচ। বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর গ্রুনলিচের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেয় টনির বাবা জ্যঁ। কিন্তু এর মধ্যে টনির সঙ্গে দেখা হয় মেডিকেলের ছাত্র মর্টেনের।
মর্টেনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে টনি। এ খবর পাওয়ার পরই টনিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে তার বাবা-মা। দ্রুত গ্রুনলিচের সঙ্গে তার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে টনিও এর বিরোধিতা করতে পারে না।
আর টনিকে সব বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বলে গ্রুনলিচ। স্বামীর কথা মেনে নেয় টনি। এদিকে ধীরে ধীরে দেনার দায়ে ডুবে যায় টনির স্বামী গ্রুনলিচ। তার পাওনাদাররা তাকে চাপ দেয় ধনী শ্বশুরের কাছ থেকে অর্থ ধার করে এনে দেনা শোধ করতে। এর ফলে জ্যঁয়ের বাবা বুঝতে পারে, টনিকে আসলে অর্থের লোভে পড়েই বিয়ে করেছে গ্রুনলিচ।
স্বামীকে অর্থ দিতে বাবাকে মানা করে টনি। মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় সে। টনির মেয়ে এরিকা গ্রুনলিচ বড় হতে থাকে নানাবাড়িতে। এর মধ্যে টনির সঙ্গে গ্রুনলিচের আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আবারও নিজের বাড়িতে সবার সঙ্গে মিশে যায় টনি। ভাই টমের সঙ্গে দারুণ সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ব্যবসার কাছে ভাইকে সাহায্য করা শুরু করে সে।
লেখক পরিচিতি
পল টমাস মান জন্মেছিলেন ১৮৭৫ সালের ৬ জুন জার্মানিতে। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক, সামাজিক সমালোচক, প্রবন্ধকার। ১৯২৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর বেশির ভাগ উপন্যাসই আলোচিত হয়েছে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের মনোজগৎ নিয়ে কাজ করার জন্য।
মান ছিলেন হানসিয়েটিক মান পরিবারের সন্তান। নিজের প্রথম উপন্যাস ‘বাডেনব্রুকসে’ নিজের পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ও সদস্যদের মনোজগৎ নিয়ে লিখেছিলেন তিনি। টমাস মানের বড় ভাই হেনরিক মানও ছিলেন একজন লেখক।
১৯৩৩ সালে যখন হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় আসেন, তখন টমাস মান পালিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে টমাস চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৫২ সালে তিনি আবারও সুইজারল্যান্ডে ফিরে আসেন।
এই দীর্ঘ সময়ে তিনি মাঝেমধ্যে জন্মভূমি জার্মানিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু পাকাপাকিভাবে থাকেননি। ১৯৪৯ সালে তিনি বেশ কিছুদিন জার্মানিতে ছিলেন। ১৯৫৫ সালে জুরিখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন টমাস মান।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।
আরো পড়ুন...
১৩.ফিওদোর দস্তয়েভস্কির ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’
১২.বুক অব জব
১১.ফার্নান্দো পেসোয়ার ‘দ্য বুক অব ডিসকোয়ায়েট’
১০. হোসে সারামাগোর ব্লাইন্ডনেস
৯. আলফ্রেড ডোবলিনের বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ
৮. টনি মরিসনের ‘বিলাভড’
৭. তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’
৬. ভার্জিলের ঈনিড
৫. মার্ক টোয়েনের ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’
৪. উইলিয়াম ফকনারের ‘আবসালোম, আবসালোম!’
৩. গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’
২. হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডলস হাউস’
১. জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’