শিল্পী বাহরাম আর নেই
প্রখ্যাত স্বশিক্ষিত শিল্পী বাহরাম আর নেই। গতকাল ২ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি বেশ কিছুদিন থেকে উচ্চরক্তচাপ, কিডনিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি দুই ছেলে আর দুই মেয়ে রেখে যান। তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় হোসেনী দালান মসজিদে। দাফন সম্পন্ন হয় সংলগ্ন কবরস্থানে।
জীবদ্দশায় তিনি তিন বছর শিল্পবিষয়ক পত্রিকা ডেপার্টের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্পী বাহরামের প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি। ঢাকা আর্ট সেন্টারে সেই প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সিরো সাদোসিমা ও বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রখ্যাত শিল্পী মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। শিল্পবিষয়ক পত্রিকা ডেপার্টের পক্ষ হতে শিল্পী বাহরামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে।
শিল্পী বাহরামের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫০ সালে। আদি নাম সৈয়দ কৌমার হোসেন সিরাজী। মাত্র ১১ বছর বয়সে শুরু করেন শিল্পীর কাজ। প্রথম জীবনে তিনি পেনসিল স্কেচ করতেন। কিন্তু তিনি এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৫ বছর বয়সে রিকশা পেইটিংয়ে হাত দেন। রিকশাশিল্পের শ্রমিকের যে শৃঙ্খলাবদ্ধ শ্রম, যে নির্দিষ্ট ছকের শিল্প করতে হয় বাহরাম তাতে তৃপ্ত হতে পারেননি। বাহরামের অসম্ভব কল্পনাশক্তি তাঁকে নতুন দৃষ্টিপাত ও ভঙ্গির দিকে চালিত করেছে। এর আগে তের বছর বয়সে বাহরাম টেক্সি পেইন্টিং হতে আঁকিবুকির শিল্প শিক্ষা, তাঁকে এ পেশায় পারদর্শী করে তুলেছে। তাঁর কাজের পরিধিতে দেখা মিলবে হরেক রকম কাজের। যেমন সাইনবোর্ড, ব্যানার আর সিনেমা স্টুডিওর ব্যাক স্কিনের সিনারি বা শিল্পকর্ম।
এসব কর্মতৎপরতা তাঁর দৃশ্যকল্প বা শিল্পচিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করেছে। বাহরামের শিক্ষাদীক্ষার হাতেখড়ি বাবার হাতেই। তাঁর কাজের জায়গা ছিল পুরান ঢাকার আগামসি লেন। ওই হিসেবে বলা যায় শিল্পী আবদুলই তাঁর শিক্ষাগুরু। কাজ করেছিলেন তাঁরই সহযোগী শিল্পী হিসেবে। কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি শিল্পের নানা কৌশল রপ্ত করেন। এই শিশু বয়সে ১৯৬০ সালের দিকে, বাহরামের গুরু তাঁকে আঁকতে দেন সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের প্রতিকৃতি। সে সময় তিনি আঁকতেন পাকিস্তানের চিত্রতারকা ওয়াহিদ মুরাদ, জেবা আর ভারতীয় সুপার স্টার দিলীপকুমার, কিশোর কুমার আর মধুবালার প্রতিকৃতি। তবে শেষ জীবনে তিনি শিল্পের নতুন ভাষা রপ্ত করেন, যা তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।