১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৬’
বাংলা একাডেমি চত্বরে ‘ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল’-এর ব্যানারে ষষ্ঠ বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি সাহিত্য অঙ্গনের রথী-মহারথীদের মিলনমেলা। আগামী ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সাহিত্য উৎসবে ১৮টি দেশ থেকে ৬৬ জন বিদেশি এবং দেড় শতাধিক বাংলাদেশি সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন।
দেশি-বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে সরাসরি সাহিত্যসহ সমাজের বিভিন্ন প্রসঙ্গে নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ থাকছে জনসাধারণের জন্য। এ নিয়েই গতকাল শনিবার আয়োজন করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের।
বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, লিট ফেস্টের পরিচালক কাজী আনিস আমেদ, সাদাফ সায্, আহসান আকবর এবং ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল এবং ব্র্যাকের প্রতিনিধি আসিফ সালেহ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন কাজী আনিস আহমেদ। তিনি জানান, ষষ্ঠবারের মতো করা এই আয়োজনের পরিধি অনেক বেড়েছে। এবার অংশ নেবেন ১৮টি দেশের ৬৬ জন প্রতিনিধি। ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ভিএস নাইপল ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সঙ্গে থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানসহ সব সহযোগী এবং দেশি-বিদেশি সাহিত্যিকরা।
কাজী আনিস আহমেদ উল্লেখ করেন, বিশ্বসাহিত্যে শীর্ষ পুরস্কার নোবেল, পুলিৎজার ও ম্যানবুকার প্রাপ্ত তিন-তিনজন সাহিত্যিক আসছেন এবারের উৎসবে। এটিকে লিট ফেস্টের অন্যতম বড় পাওয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘বরাবরের মতো অন্য দেশের সাহিত্যের চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলা সাহিত্য। এই উৎসবের মূল বিষয় হচ্ছে বাংলাকে বিশ্বে এবং বিশ্বকে বাংলার কাছে তুলে ধরা।’
খুব সম্প্রতি চলে গেলেন আমাদের বরেণ্য কথা সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক। তাঁর কথা উল্লেখ করে কাজী আনিস বলেন, “এই মহতী লেখককে স্মরণ করে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে এই আয়োজনে। লিট ফেস্টে সৈয়দ হকের লেখা উপন্যাস ‘নীল দংশন’-এর একটি অংশ ইংরেজিতে মঞ্চায়িত হবে। থাকবে তাঁর জীবন নিয়ে বিশেষ আলোচনা। এ ছাড়া খ্যাতিমান লেখক ফকরুল আলমের অনূদিত মীর মোশাররফ হোসেনের খ্যাতনামা উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’র প্রকাশনা উৎসব হবে এই আয়োজনেই।”
এ বছর থেকে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে এই ঢাকা লিট ফেস্টের মঞ্চে। কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে আসছে জেমকন কর্তৃপক্ষ।’
এবারই প্রথমবারের মতো লিট ফেস্টের অনেক আলোচনার সেশন অনূদিত হবে সরাসরি। যাতে বিদেশিরাও বাংলা সেশন শুনতে ও বুঝতে পারেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, নিরাপত্তার খাতিরে বড় ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক ও স্পন্সরদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর আগ্রহ এবং সার্বিক সহযোগিতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।’
উৎসবের আরেক পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ‘কোনো উৎসবে এতজন পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের আগমন বিরল। শুধু নোবেল, বুকার বা পুলিৎজার নয় আরো অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের সম্মেলন ঘটতে যাচ্ছে এখানে।’ তিনি জানান, ভিএস নাইপল ভীষণ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় আসার প্রসঙ্গে। তিনি অনেক পড়েছেন ঢাকা নিয়ে। থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় লেখক প্রাবদা ইয়ুন আসছেন। তিনি দেশটির বেস্ট সেলার লেখক। টিম কুক আসছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। তাঁর লেখা নিয়ে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি হয়েছে।
নাইপলের ওপর বিবিসির একটি বিশেষ ডকুমেন্টারি ‘স্ট্র্যাঞ্জ লাক অব নাইপল’ দেখানো হবে এই উৎসবের প্রথম দিনে। এবারের আয়োজনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা থাকছেন অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে। বিবিসির সাউথ এশিয়ার ব্যুরো চিফ জাস্টিন রোলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির সাংবাদিক বারখা দত্ত ছাড়াও অনেক সাংবাদিক আলোকিত করবেন লিট ফেস্টের মঞ্চ।
উৎসবের পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্য, ঐতিহ্য, জগতের কাছে তুলে ধরতেই এই আয়োজন। বিশেষ করে পালা, জারি গান, বেহুলা লক্ষিন্দরের জারিসহ উৎসবের অন্যতম সহযোগী ব্র্যাকের সংস্কৃতি বিভাগ গ্রাম পর্যায়ে যেসব কাজ করছে সেগুলোও তুলে ধরা হবে।’
সাদাফ উল্লেখ করেন, দুটো বিশেষ ওয়ার্কশপ হচ্ছে তরুণদের জন্য। রিচার্ড পিয়ার এডিটিং ওয়ার্কশপ করাবেন। ওয়ার্ল্ড মিউজিক ম্যাগাজিনের এডিটর সায়মন আর্ট জার্নালিজমের ওপর একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবেন। তিনি জানান, কবিতাকে ভীষণ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে লিট ফেস্টে। এজন্যই ২০১৪ সালের পুলিৎজার বিজয়ী কবি বিজয় শেষাদ্রী আসছেন এই ফেস্টে। তিনদিনের এই আয়োজনে ৯০টির বেশি সেশন রয়েছে।
শুধু শিল্প সাহিত্য নয়, জেনেটিকস সায়েন্স, নিওরো সায়েন্স অ্যান্ড আর্কিটেকচারের মতো সায়েন্টিফিক বিষয় নিয়েও বেশ কয়েকটি সেশন রয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘এত বড় উৎসব সত্যিই আমাকে আপ্লুত করেছে। বাংলা একাডেমি বরাবরই দেশকে এবং দেশের সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করছে’। তিনি লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
লিট ফেস্ট বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্য এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য চর্চাকে তরান্বিত করেছে বলেই মনে করেন শামসুজ্জামান খান। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনুবাদকের সংখ্যা গুটিকয়েক। আশা করছি সাহিত্যের এই শাখাকে উন্নত করার জন্য এ ধরনের আয়োজন নিয়মিতই হবে।’
আয়োজনের প্লাটিনাম স্পন্সর ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান । তিনি বলেন, এই আয়োজনে ব্র্যাকের যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে ব্র্যাকের উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে এ ধরনের উৎসব ভীষণরকম সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্র্যাকের আট হাজার গ্রন্থাগারসহ সংস্কৃতিবিষয়ক নানা উদ্যোগ রয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এসব আয়োজনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
তিনদিনের এ উৎসবটির প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য মুখর থাকবে বিভিন্ন আয়োজনে। ২০১৬ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী ও ২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রাইজ ফর লিটারেচার ইভ উইল্ড জয়ী ডেবোরাহ স্মিথ, উত্তর কোরিয়ার লেখক হাইয়েনসিও লিসহ নেপাল, ভুটানসহ অনেক দেশের সাহিত্যিকরা আসছেন লিট ফেস্টের আসর মাতাতে।
এ ছাড়া দর্শনার্থী ও সাহিত্যপ্রেমী থেকে শুরু করে সব অঙ্গনের মানুষের জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজনে অংশ নিতে কেবল করতে হবে একটি রেজিস্ট্রেশন মাত্র। যেটি নিশ্চিত করবে অংশগ্রহণকারীর পরিচয়। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পাওয়া ই-টিকেটটি ব্যবহৃত হবে আয়োজনে অংশগ্রহণকারীর প্রবেশপত্র হিসেবে। সবার সুবিধার্থে ই-টিকেটটি প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বহন গ্রহণ যোগ্য হবে। রেজিস্ট্রেশন করতে ক্লিক করুন এই ঠিকানায় : http://dhakalitfest.com/?page_id=8
তবে বিশেষ এ আয়োজনে অংশ নিতে যাওয়া বিশেষ বক্তাদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন নিম্নে উল্লেখ করা ঠিকানায়, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় থেকে শুরু করে সংক্ষিপ্ত আদ্যোপান্ত। http://dhakalitfest.com