শিল্পী নাসরীনের ‘প্লিজেন্ট জার্নি’
আমারে তুমি অশেষ করেছ
এমনি লীলা তব,
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ
জীবনও নব নব।
আজ এই প্রদর্শনী উপলক্ষে আমার অত্যন্ত প্রিয় রবীন্দ্রনাথের এই চারটি লাইন আমার শিল্পী জীবনের সাথে সরাসরিভাবে মিলে গেছে। নিজের প্রদর্শনী সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে রং-তুলি আর ক্যানভাসের সাথে যাঁর নিবিড় সখ্য, সেই শিল্পী অধ্যাপক নাসরীন বেগম ।
গ্যালারি চিত্রকে ‘প্লিজেন্ট জার্নি’ শিরোনামে সাম্প্রতিক সময়ে ৬১টি চিত্রকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে শিল্পী নাসরীন বেগমের একক চিত্রপ্রদর্শনী। গত ১৫ মে সন্ধ্যা ৬টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান-ইয়ং।
প্রকৃতির অতিসাধারণ বিষয়, যা অনেকেই এড়িয়ে যায় কিন্তু শিল্পী তাঁর তুলির নিপুণ ছোঁয়ায় মূর্ত-বিমূর্ততার ছায়ায় অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা ক্যানভাসে। একটি স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত দেয়ালের সাথে কোনো রকমে লেগে আছে একটি ভাঙা জানালা, সেখানে কী অসীম সাহসে বেড়ে উঠছে একটি ছোট্ট সবুজ লতা।
আবার প্রায় একই রকম দ্বিতীয় জানালায় একটি মাকড়সা তাঁর জীবন জালে ব্যস্ত। এভাবেই শিল্পী একেকটি জীবনের গল্প চিত্রায়ন করেছেন তাঁর ‘জানালা-১’ ও ‘জানালা-২’ শীর্ষক শিল্পকর্ম দুটিতে। আবার ‘শরৎ’ নামক শিল্পকর্মে দিগন্ত জোড়া সবুজ-শ্যামল ফসলের মাঠে আহার ও বিশ্রামরত কৃষক, কোনো ক্যানভাসে জলাশয়ে ফুটে থাকা বিভিন্ন রঙিন ফুল, তুলির বিমূর্ত আঁচড়ে নারী ও ফুলের বর্ণিল সূত্রতা, জলরাশি থেকে উঠে আসা বিভিন্ন রকমের রঙিন শামুক ও ঝিনুক দ্বারা আবৃত ‘সমুদ্রকন্যা’কে দেখে যে কারো চোখ জুড়াবে।
ক্যানভাসের রক্তস্নাত লাল জমিনে ছড়ানো-ছিটানো আছে অসংখ্য সাদা শুভ্র শিউলি ফুল, যে চিত্রকর্মটি দেখলেই বুকভরা শ্রদ্ধা জাগে। শহীদদের প্রতি হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসা নিয়ে এভাবেই শিল্পী এঁকেছেন রায়েরবাজার বধ্যভূমি।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিল্প সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মো. মনিরুজ্জামান।
প্রদর্শনীটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
গ্যালারি চিত্রক : বাড়ি : ২১, রোড : ৪, ধানমণ্ডি আ/এ, ঢাকা।