ভালোবাসা-শ্রদ্ধায় আকরম হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
উপস্থিত সবার মাঝেই ছিল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ অনন্য মনোভাব। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে বাংলা একাডেমিতে হাজির হতে থাকা সবার মাঝেই ছিল একটি নাম, তিনি অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। কেননা, অনেকটা নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এ মানুষটির গত বৃহস্পতিবার ছিল ৭২তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে অনুষ্ঠিত হলো ‘সৈয়দ আকরম হোসেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান’।
বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ ও ‘ধ্রুবপদ’-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনাপ্রাপ্ত সৈয়দ আকরম হোসেনের শিক্ষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, সাংবাদিক আবেদ খান, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং কবি কামাল চৌধুরী।
আয়োজনের শুরুতেই সৈয়দ আকরম হোসেনকে ভালোবাসার চাদর পরিয়ে দেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এ সময় তাঁর গুণমুগ্ধ ও অনুরাগীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ ও ‘ধ্রুবপদ’-এর যৌথ প্রচেষ্টায় প্রকাশিত সৈয়দ আকরম হোসেন সংবর্ধনাগ্রন্থ ‘জ্যোর্তিময়’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আয়োজনে নিজের ছাত্রকে অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আকরম হোসেন আমাদের শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল হাই এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী এই দুজনের বিশেষ স্নেহ-ভালোবাসা ছাত্রজীবন থেকে লাভ করে এসেছে।’
আনিসুজ্জামান আরো বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আকরম যখন আত্মগোপন করে আছেন, তখন তাঁর উদ্দেশে মুনীর চৌধুরী অত্যন্ত মর্মভেদি একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি পড়ে আকরামের প্রতি তাঁর ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করা যায়। ছাত্র হিসেবে আকরমের যে গুণাগুণের পরিচয় তাঁর শিক্ষকরা পেয়েছিলেন, যার গুণে শিক্ষকরা তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন ঠিক আকরম যখন শিক্ষকতায় প্রবেশ করলেন, তখন প্রথম থেকেই ঠিক একইভাবে ছাত্রছাত্রীদের নিখাত ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন।’
শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘আকরম ছাত্রজীবনে আনিসুজ্জামান, আবদুল হাই ও আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো শিক্ষক পেয়েছিলেন। ফলে এমন বিদগ্ধ শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়ার সুযোগ তাঁর হয়েছিল। তার মেধা, যুক্তি, উপস্থাপন ও বলবার ক্ষমতা বিরল। এ কারণেই আমার মনে হয়, আমি যদি তাঁর ছাত্র হতাম, তবে তাকে অনুসরণ করতাম।’
আবেদ খান বলেন, ‘আমার বন্ধু আকরম অত্যন্ত নেপথ্যচারী এবং অভিমানী মানুষ। নেপথ্যচারিতাই সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তিনি যেখানে যান, অসংখ্য অনুরাগী নিয়ে যান। এটা বর্তমান সময়ে বিরল।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক নন কিন্তু তাঁকে আমি শিক্ষক হিসেবে ভাবি। আমি বহুকাল ধরে তাঁকে অনুরণ করছি। শিক্ষক ও লেখক হিসেবেই শুধু নন, ‘উলুখাগড়া’ নামের পত্রিকা সম্পাদনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, এস ওয়াজেদ আলী, বিভূতিভূষণের মতো লেখকদের সম্পাদনা করে একজন দক্ষ সম্পাদক হিসেবেও আমাদের কাছে আবিষ্কৃত হয়েছেন। তিনি তিনভাবে শিক্ষা দিয়ে গেছেন- ক্লাসে,
শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে ও শিক্ষক তৈরি করে।’
ভালোবাসায় সিক্ত সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, ‘আজকের আয়োজনে এতগুলো দীপ্ত মনীষীর মাঝে আমার উপস্থিত হওয়ার যে ঘটনাটি এটি আমি আমার বিরল দুর্লভ ভাগ্য বলে মনে করি। এমন হওয়ার কথা ছিল না। আসলে এই মুহূর্তে আমার কিছু বলার নেই। শুধু বলব, আমি মুগ্ধ, অভিভূত, আনন্দিত, অনুপ্রাণিত।’