২১তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে
‘বেহালার সুর আমার খুব প্রিয়, সুমধুর লাগে, আমার মতো হয়তো আরো অনেকেরই লাগে কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক অস্থিরতায় সে সুর আমার ছন্দ হারাচ্ছে, সেই অস্থিরতায় আমার তপ্ত বেহালা পুড়ে গলে পড়ছে আর ভূলুণ্ঠিত সুরগুলো পোড়া প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভালোলাগার ব্যাপার এটাই-চার দশক আগে শুরু হওয়া জাতীয় প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতা এখনো অক্ষুণ্ণ আছে।’ নিজস্ব অনুভূতি মিশিয়ে নিজের শিল্পকর্মের বর্ণনা এভাবেই দিচ্ছিলেন জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ‘বেগম আজিজুন্নেসা পুরস্কার’প্রাপ্ত শিল্পী হাবীবা আখতার পাপিয়া ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশের চারুশিল্পের একটি বৃহত্তম উৎসব। আজ থেকে ঠিক ৪২ বছর আগে ১৯৭৪ সালে সমকালীন চিত্রকলা প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি চারুকলাবিষয়ক কর্মকাণ্ড শুরু করে। সেই সূত্রে ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। তার পর থেকেই প্রতি দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় এই প্রদর্শনী। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ মে বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ২১তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এবার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে সারা দেশ থেকে ৬৯৯ জন শিল্পীর ১৬৬০টি শিল্পকর্মের জন্য আবেদন জমা পড়লেও সেখান থেকে নির্বাচিত ২৬১ জন শিল্পীর ২৭৩টি শিল্পকর্ম স্থান পায় প্রদর্শনীতে। যার মধ্যে তেলরং, জলরং, অ্যাক্রেলিক, গোয়াশ, প্যাস্টেল, পেনসিল, ট্যাপেস্ট্রি ও মিশ্রমাধ্যমে করা ১৫৮টি পেইন্টিং, কাঠ, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টার, ধাতু, সিরামিক, ফাইবার গ্লাস ও মিশ্রমাধ্যমে করা ৪৯টি ভাস্কর্য, উডকাঠ, এচিং, ড্রাই পয়েন্ট, এচিং অ্যাকুয়াটিন্ট ও মিশ্রমাধ্যমে করা ৩২টি ছাপচিত্র, স্থাপনা ও ভিডিও স্থাপনা ৩১টি এবং তিনটি পারফরমেন্স আর্ট রয়েছে প্রদর্শনীতে।
এই প্রদর্শনী ঘিরে বিভিন্ন মাধমে দেওয়া হয় ১০ পুরস্কার।
এবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান শিল্পী রুহুল করিম রুমী, এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তিনটি সম্মানসূচক পুরস্কার পান শিল্পী মিঠুন কুমার সাহা, রুহুল আমিন তারেক ও শিমুল সাহা । শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টন পান বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার, সোসাইটি ফর প্রমোশন অব বাংলাদেশ পুরস্কার পান শিল্পী রাসেল কান্তি দাস, এবি ব্যাংক পুরস্কার পান শিল্পী আরিফ আল করিম ভূইয়া, ভাষাসৈনিক গাজীউল হক পুরস্কার পান শিল্পী ইফাত রেজোয়ানা রিয়া, দীপা হক পুরস্কার পান শিল্পী মো. সানা উল্লাহ এবং বেগম আজিজুন্নেছা পুরস্কার পান শিল্পী হাবীবা আখতার পাপিয়া ।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এ বছর সরকারিভাবে এক কোটি টাকার ছবি কেনা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে আরো বড় অঙ্কে ছবি কেনার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে একটি স্থায়ী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে দর্শক এসে ঘুরে না যায় এবং এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো এক সপ্তাহ বা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করা হবে।
শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জানাই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের। সেই সাথে তাদের কাছে আরো নতুন নতুন সৃষ্টি কামনা করি।’
প্রদর্শনীটি আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে। আর খোলা থাকবে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।