ইসলামি বইমেলায় শিশুদের বিপুল সাড়া
আজ শুক্রবার। একদিকে পবিত্র জুমার দিন, অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছিল ছুটি। ফলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব চত্বরের ইসলামি বইমেলায় ক্রেতা-দর্শকের আনাগোনা যেকোনো দিনের তুলনায় ছিল বেশি। শিশুদের জন্য নির্ধারিত স্টলগুলোতে ছিল ভিড়। বাবার সঙ্গে মেলায় এসে বই কিনছিল তারা। এই বইমেলার প্রচার-প্রচারণা বেশি থাকলে পাঠক-ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ত বলে মনে করছেন উপস্থিত অনেকে। যদিও তারা বলেছেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের বইমেলা সুন্দর ও গোছানো হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় ইসলামি বইমেলা। এর উদ্বোধন করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, জুমার নামাজের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে বইমেলাতে। সারা সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোর আজ যখন ভিড় বাড়তে থাকে তখন বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তায় আসে স্বস্তি। ‘শিশুকানন’ প্রকাশনীর বিক্রেতা বলেন, ‘বইমেলার শুরুর দিকে তেমন লোকসমাগম না থাকায় হতাশ ছিলাম। তবে, ছুটির দিনে বইমেলায় লোকসমাগম বেশি, তাই বিক্রিও বাড়ছে।’
‘মাকতাবাতুল হেরা’ বিক্রেতা আব্বাস বলেন, অন্য দিনের চেয়ে ছুটির দিনে বই ভালো বিক্রি হয়। বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাসের বই।
‘মাকতাবাতুল ইসলাম’ মাওলানা তাকি ইসলাম বলেন, এবারের বইমেলা অত্যন্ত সুন্দর ও গোছানো হয়েছে। আমরা খুশি যে, আমরা প্রাণ খুলে আমাদের আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
‘গার্ডিয়ান পাবলিকেশন’র অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদুল হাসান বলেন, বইমেলা মানুষের মনন বিকাশের জন্য সহায়ক। এটা আগামীতে আরও প্রাণবন্ত হবে, আরও সারা ফেলবে বলে মনে করি।
‘সন্দীপন’ স্টলের বিক্রয়কর্মী জাবের বলেন, আমাদের সব ধরনের বই ভালো বিক্রি হয়, অনলাইনে বই দেখে এবং রিভিউ দেয়। ও পছন্দ করে বইমেলা এসে কিনে নেয়।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, শিশু-কিশোরদের হাতেই বেশি বই। অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের চাহিদা অনুযায়ী বই কিনে দিচ্ছেন। ওমর ফারুক (৯) বলে, বইমেলায় এসে ভালো লেগেছে। আমি বই নিয়েছি। শিশুদের প্রথম পাঠ, ছোটদের প্রিয় নবী (সা.), সাহসী মানুষের গল্প, ছোটদের ৫০ আয়াত ইত্যাদি কিনেছি।
সিরাজুল ইসলাম (২৬) বাড্ডায় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। তিনি বলেন, ইসলামি বইমেলা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। এবার আমি আমার বন্ধুকে নিয়ে এসেছি, আমরা তাফসির ও দোয়ার বই নিয়েছি।
আরো অনেকে, নিয়েছেন, ওসমানী সব্বতার ইতিহাস, বাংলায় ইসলাম ও মুসলিম সভ্যতা, বিয়ে, বন্ধন, রিভাইভ ইয়োর হার্ট, একগুচ্ছ নাসিহা, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ, মুসলিম উম্মাহর অধঃপতন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (১ম-২য় খণ্ড) প্রভৃতি।
অভিভাবক রিয়াজ হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েরা বই পড়ার পরিবর্তে বাসায় গেমস, ইন্টারনেটে সময় নষ্ট করে। তাই ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি মনোযোগী করতে আমার বাতিজাকে বইমেলায় নিয়ে এসেছি।
সাকিব আহমেদ বলেন, শিশুদের ইসলামিক গল্প, নবীদের কাহিনী ও সাহাবীদের জীবনীবিষয়ক বই পড়ানো উচিত।
এবারের মেলাকে নান্দনিক ও উৎসবমুখর করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। আছে লেখক কর্নার, শিশু কর্নার, নারীদের বিশেষ ব্যবস্থা, ঘোষণা মঞ্চ, তথ্যকেন্দ্র এবং নানা আয়োজন। এ ছাড়া ইসলামি বইমেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে নিয়মিত আলোচনা সভারও আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে লেখকরা তাদের বই নিয়ে নিজেদের মতো করে উন্মুক্ত আলোচনা করে থাকেন।
স্টলগুলোতে শিশুদের জন্য যে বইগুলো অভিভাবকরা বেশি পছন্দ করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটদের প্রিয় নবী (সা.), ছোটদের আদব সিরিজ, আলোর গল্প, ভালোর গল্প সিরিজ ১-৫, ঈমান সিরিজ (১-৪ খণ্ড), সাহসী মানুষের গল্প- ১ম থেকে ৫ম খণ্ড, শিশুদের প্রথম পাঠ, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, গল্পে আঁকা চল্লিশ হাদিস, ছোটোদের নবি সিরিজ (১-১০ খণ্ড), ছোটদের ৫০ আয়াত প্রভৃতি। এ ছাড়া আব্দুল আজিজ আশ-শিন্নাভি ‘যখন তুমি তরুণ’, ছোটদের ছবি আঁকার কলা-কৌশল নামে আঁকা শেখার সিরিজ বইও পাওয়া যাচ্ছে এই বইমেলায়।
রকমারি.কম, প্রচ্ছদ প্রকাশন, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, ইসলামিয়া কুতুবখানা, মাকতাবাতুল ইসলাম, আইসিএস পাবলিকেশন, ইসলামিয়া কুতুবখানা, রাহনুমা প্রকাশনী, শিশুকানন, ওয়াফি পাবলিকেশন, সমকালীন প্রকাশনসহ বইমেলার শিশুদের স্টলে।
ইসলামী বইমেলায় শিশু কর্নার
শিশু কর্নারকে দৃষ্টিনন্দন অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে তাদের জন্য থাকছে শিক্ষামূলক আয়োজন। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণের শোভা বেড়েছে অনেকটাই। এবারই প্রথম ইসলামি বইমেলা ঘিরে এমন সব আয়োজন করা হয়েছে। যেকোনো বয়সি শিশু-কিশোরদের নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন অভিভাবকগণ।
মেলায় বিশেষ ছাড়
বইমেলায় পাঠক তার পছন্দের বই কিনতে পারছেন বিশেষ ছাড়কৃত মূল্যে। একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর যেসব বইয়ে ২০ থেকে ২৫ শতায়শ ছাড় থাকে এবার মেলা উপলক্ষে তারা দিচ্ছেন ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বা আরও বেশি ছাড়, সঙ্গে নির্ধারিত মূল্যের বইতেও পাওয়া যাচ্ছে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্টে। আর প্রতি শুক্রবারে অধিকাংশ প্রকাশনীতে থাকবে বিশেষ অফার।