আবু ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন : পুলিশ
আটদিন পর অবশেষে ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের সন্ধান মিলেছে। পাশাপাশি আবু ত্ব-হার সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া অপর তিনজনও একই সময়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। আজ শুক্রবার বাড়ি ফেরার পর আবু ত্ব-হাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রংপুর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ ব্যাপারে আজ বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি জানান, আবু ত্ব-হা ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন। গাইবান্ধার ত্রিমোহিনী এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে তিনি তাঁর তিন সঙ্গীসহ আত্মগোপনে ছিলেন।
আবু ত্ব-হাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার দিন রাজধানীর গাবতলী থেকে স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সর্বশেষ কথা বলেন তিনি। এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে আবু ত্ব-হা চলে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনীতে এক বন্ধুর বাড়িতে। এরপর থেকে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
ব্যক্তিগত কারণে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন উল্লেখ করে ডিবির উপকমিশনার আরও বলেন, ত্ব-হার অন্য সঙ্গীরা এখন বাড়ি চলে গেছে।
স্বজনরা জানায়, গত ১০ জুন এক ওয়াজ মাহফিল শেষে ফেরার পথে নিখোঁজ হন আবু ত্ব-হা ও তাঁর তিন সঙ্গী। বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর সন্ধানের দাবি উঠে। সন্ধান চায় পরিবারও।
আটদিন পর আজ শুক্রবার রংপুর নগরীর বাবুখাঁ মাস্টারপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ি ফিরে আসেন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। একই সময়ে আদনানের সঙ্গে থাকা তিন সঙ্গী আবদুল মুহিত, ফিরোজ এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিনও বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে, আবু ত্ব-হা আদনান ফিরে আসায় স্থানীয় পুলিশকে ধন্যবাদ ও মহান আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে পরিবার ও স্বজনরা।
বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ত্ব-হাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে কথা বলেন ডিবির উপকমিশনার।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হওয়ার পর একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। একাধিকবার সেখান থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কথা বলেছি উনার (ত্ব-হা) সঙ্গে। উনি যেটা বলেছেন, মুক্তিপণের ব্যাপারটা তাঁর কাছে সন্দেহমূলক মনে হয়েছে। আমি বলেছি, এ রকম যদি হয়ে থাকে তাহলে তারা আপনাদের কিছু জিজ্ঞাসা করেছে কি না বা কোনো কথাবার্তা বলেছে কি না। তারা বলেছে, না দু-চারজনকে সন্দেহ হয়েছিল পরে আমি আরেক মোড়ে গিয়ে দেখি নাই। এই যে মুক্তিপণের যে বিষয়টি এটা কিন্তু তাঁর স্ত্রীও ফেসবুকে লাইভে বলেছেন। ভুয়া নম্বর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারাও চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাদের পায় নাই। অনেক সময় এরকম ঘটনা ঘটলে কিছু ফ্রড আছে তারা বিভিন্নভাবে এই কাজগুলো করার চেষ্টা করে।’
আপনি বলছেন, তারা স্বেচ্ছায় বাসায় চলে এসেছে? তারা যে বাসায় ছিল সেখান থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়েছিল কি না। এ ব্যাপারে উপকমিশনার বলেন, ‘এখনও আমরা বিস্তারিত জানি না। আমি তাদের বলেছি যে, তাঁর মা বৃদ্ধ, তারা এত জাতীয় আন্তর্জাতিক খবর জানে না, তাদের বাসায় টিভিও নাই।’
পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রত করা জন্য এ কাজটি করা হয়েছে কি না বা এটা উদ্দেশ্যমূলক কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘না, এটা উদ্দেশ্যমূলক না। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করবে এত কিছু ভেবে তারা এটা করেনি।’
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে পড়াশোনা করা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে খুতবা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন।