আল জাজিরার প্রতিবেদন অসৎ উদ্দেশ্যে করা : সেনাপ্রধান
আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘যে ধরনের অপচেষ্টাগুলো হচ্ছে, সেটা সেনাবাহিনীর মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি জাতির গর্ব, দেশের গর্ব, সেই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তারা নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, যাতে করে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তাদের আমি বলতে চাই, সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং ওয়েল মোটিভেটেড একটি ফোর্স, আগের থেকে অনেক বেশি সুসংহত। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড অত্যন্ত এফেক্টিভ। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঘৃণাভরে এ ধরনের অপচেষ্টাকে অতীতে প্রত্যাখ্যান করেছে, এখনও করছে। আমাদের চেইন অব কমান্ডে যারা আছে, আমরা সবাই সতর্ক আছি।’
আজ মঙ্গলবার সকালে আর্মি এভিয়েশনের বেসিক কোর্সের অ্যাওয়ার্ড সেরেমনি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সেনাপ্রধান।
এ সময় সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের যে কোনো আদেশ-নির্দেশ পালনে সদাপ্রস্তুত।’
জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমার ভাইদের সম্পর্কে যে অপপ্রচার হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। এবং খুব শিগগিরই আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে। আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার অবস্থান, দায়িত্ব নিয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। আমার ভাইয়ের সঙ্গে যখন মালয়েশিয়ায় দেখা করেছি, তখন তাঁর নামে কোনো মামলা ছিল না। যে একটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ছিল, সেটা থেকে সে অলরেডি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সেই অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল, আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম। আল জাজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। কারণ আমাদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে ওই সময় কোনো সাজা ছিল না, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। তাঁর আগেই তাঁদের বিরুদ্ধে যে মামলাটা ছিল, সেটা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সেনাপ্রধান আরো বলেন, ‘বিভিন্ন ভ্রমণের সময় আমার যে চিত্র ধারণ করা হয়েছে, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে মনে করি, যখন আমি অফিশিয়াল ক্যাপাসিটিতে কোথাও থাকব, তখন আমার নিরাপত্তা অফিশিয়ালি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। সেখানে আমার অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু কোথাও যখন আমি ব্যক্তিগত সফরে থাকি, ট্রানজিটে যদি কোনো আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাই, সেই সময় অফিশিয়াল প্রটোকল ব্যবহার করা আমি সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি, সেটা অপচয় এবং সেটা উচিত নয়। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ অসৎ উদ্দেশে কিছু করে থাকে—আপনারা তো ভালো করেই জানেন, যারা এই কাজগুলো করেছে, কেন করেছে, তাদের উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে?’
সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা প্রশ্ন করেছেন, বারবার কেন আমাকে টার্গেট করা হয়। আমার মনে হয়, সে দায়িত্বটা আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম, আপনারাই বুঝে নিন, খুঁজে নিন, কেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। সেনাপ্রধানকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আপনাদের এই জিনিসটা বুঝতে হবে।’
জেনারেল আজিজ আরও বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণভাবে সচেতন যে, আমার কারণে যদি কখনও আমার ইনস্টিটিউশন, অরগানাইজেশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমাদের সরকার যেন কোনোভাবে বিব্রত না হয়, বিতর্কিত না হয়, আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। বিভিন্ন জায়গা থেকে কাটপিস, অন্যান্য জিনিস সন্নিবেশিত করা- তাঁরা এগুলো করতেই পারবে। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। এবং এগুলো আপনারা আপনাদের কলমের মাধ্যমে এর মধ্যেই জবাব দিয়েছেন। এবং সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপার আছে যে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে হয়তো কিছু করার থাকবে না। আমি নিশ্চিত সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যারা আছে বা সংস্থায় যারা আছে, তাঁরা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’