কিশোরীকে চেয়ারম্যানের বিয়ে : তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় গত শুক্রবার প্রেমের সালিশ করতে গিয়ে এক কিশোরীকে বিয়ে করেছিলেন কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পটুয়াখালীর ডিসি, জেলা নিবন্ধক ও পিবিআইকে তদন্ত করে আলাদা তিনটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন আদালত এবং ওই কিশোরীকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর আজ রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম ও ইকরামুল হক টুটুল বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ সময় আদালত বলেন, পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে যা বুঝলাম সালিশ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষমতার অপ্যবহার করেছেন ওই চেয়ারম্যান।
পরে এ মামলার পরবর্তী সময়ে আদেশের জন্য আগামী ৮ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আইনজীবী আমাতুল করিম ও ইকরামুল হক টুটুল বলেন, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার তদন্ত করবেন, পিবিআই ফৌজদারি অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করবে এবং জেলা নিবন্ধক বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে তদন্ত করবেন।
গত শুক্রবার চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে কিশোরীকে বিয়ে করার পর প্রেমিক যুবক বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানা গেছে। তবে বিয়ে করার পরদিন চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে গেছে সেই কিশোরী। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তালাক সম্পন্ন হয়। কিশোরীর বাবা নজরুল ইসলাম মেয়ের তালাকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাঁর মেয়ে এখন বাড়িতেই আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কনকদিয়া ইউনিয়নের ওই কিশোরীর সঙ্গে একই এলাকার নারায়ণপাশা গ্রামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারকে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে ওই কিশোরীকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি ওই কিশোরীকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। পরে ওইদিন দুপুর ১টার দিকে স্থানীয় কাজী মো. আবু সাদেককে বাড়িতে ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার।
এদিকে, এই বিয়ের ঘটনাটি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গতকাল শনিবার ওই একই কাজির মাধ্যমেই তালাক সম্পন্ন হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, ওই কিশোরী তাঁকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই কিশোরীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।