কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় আমৃত্যুসহ ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত জাহাঙ্গীর হোসেন মুকুলকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে তিনজনকে আমৃত্যু, সাতজনকে যাবজ্জীবন এবং ছয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম ১০ আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্তরা হলেন দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের ওয়াসিম রেজা (পলাতক), সোহেল রানা ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাটদাহ গ্রামের মানিক জোয়ার্দার (পলাতক)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন পিচ্ছি মনির (পলাতক), মোটা জসিম (পলাতক), উল্লাস খন্দকার, তৈমুল ইসলাম বিপুল, ফারুক চেয়ারম্যান, আব্দুল মান্নান মোল্লা (পলাতক) এবং বিপুল চৌধুরী। এ ছাড়া এই সাত আসামিকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাণ্ড। এ মামলায় ছয় আসামি মনির, জসিম, সোহেল, ওয়াসিম, উল্লাস ও মানিককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলা থেকে নফর আলী, আনোয়ার কাদের, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন এবং শরিফুল ইসলাম বিপুলকে খালাস দেওয়া হয়।
আসামিরা পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় নেতাকর্মী এবং আন্তজেলা অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর হোসেন মকুল ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার বাড়ি যশোরের শার্শায়। ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবরে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্কের খাতিরে এক মেয়ে তাকে দৌলতপুরে ডেকে আনেন। পরে আসামিরা তাকে অপহরণ করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ২৯ অক্টোবর আসামিদের এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীরকে হত্যা করে দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন হিসনা নদীর পাড়ে আসামি ফারুক চেয়ারম্যানের জমিতে পুতে রাখা হয়। পরে ২ ডিসেম্বর সেখান থেকে মকুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত মুকুলের বড় ভাই ইলিয়াস কবির বকুল বাদী হয়ে ওই দিনই দৌলতপুর থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ আদালত এ রায় দেন।
মামলার বাদী ইলিয়াস কবির বকুল বলেন, আমি আসামিদের শাস্তির রায় শুনে অত্যন্ত খুশি।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়েছে।