চরম বিপর্যয়ে সুনামগঞ্জ, পানিতে থই থই পুরো শহর
পুরো শহর পানিতে থই থই। নেই দাঁড়ানোর জায়গা। যে যার মতো ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কিন্তু, আশ্রয় নেওয়ার জায়গাও পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, সরকারি অফিস থেকে শুরু করে কোনো হোটেল-মোটেলও ফাঁকা নেই। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পেলেও দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও খাবার পানির সংকট।
এ ছাড়া অলিতে-গলিতে হাঁটু পানি থাকায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো কোনো এলাকায় গলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মোবাইল-টেলিফোনে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার এ বেহাল দশায় প্রশাসনের সঙ্গেও যোগ হতে পারছে না অনেকে। রাস্তাঘাটে ফার্মেসিসহ খোলা থাকছে না কোনো দোকানপাট। রাতে মোমবাতি জ্বালানোর মতোও ব্যবস্থা নেই।
এক কথায় সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এবারের বন্যা ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এত পানি জেলার মানুষ আর কখনও দেখেনি। ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ সবকিছু বন্যার কবলে।
দিনে নৌকা নিয়ে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে এবং বাজার থেকে শুকনো খাবার কিনে আনছে। কিন্তু, সন্ধ্যার পর থেকে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষ প্রাণে বাঁচতে দোতলা ভবনেও আশ্রয় নিয়েছে।
শহরের বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, ঘরে গলাপানি থাকায় তারা প্রাণ নিয়ে ফিরেছে। তাই, খাবার নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
শহরের বড়পাড়া এলাকার আবদুল মতিন জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন তিনি। তবে, খাবারের সংকটের পাশাপাশি শৌচাগার ব্যবস্থার সংকটও দেখা দিয়েছে চরম মাত্রায়।
এদিকে, এমন বিপর্যয়ে সহায়তা পাচ্ছে না বন্যাকবলিত এ মানুষেরা। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষেরা জানান, খাবার ও পানির জন্য অসহায় হয়ে পড়েছে তারা। যে যার মতো খাবারের ব্যবস্থা করছে।
এদিকে, সেনাবাহিনীর একটি দল সুনামগঞ্জের বন্যার্ত মানুষের জন্য কাজ করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ উপজেলায় সেনাবাহিনীর পাঁচটি দল কাজ করছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সব আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এলে বাকি ব্যবস্থা করা হবে।