জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা শেষ
জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের কয়েকটি জেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দিনের বিভিন্ন সময়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন তারা।
উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের এ মনোনয়নপত্র জমা দেন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদপ্রার্থীরা।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ অক্টোবর এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে এ ভোটগ্রহণ করা হবে।
গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল আজ। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্রের আপিল করার সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। এ বিষয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এনটিভি প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঈনউদ্দিন সুমন জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। আজ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন হলেও তিনি বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের কাছে এ মনোনয়নপত্র জমা দেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। তবে এ পদে আরও দুটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হলেও আজ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারে তা ঠেকাতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন অফিসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিল।
মুন্সীগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ জানান, আজ মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল। এ দিন চেয়ারম্যান পদে একজন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩০ জন প্রার্থীসহ মোট ৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই নির্বাচনে জেলায় মোট ভোটার ৯২২ জনপ্রতিনিধি।
জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বর্তমান প্রশাসক ও গেল দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে কোনো মনোনয়নপত্র জমা না হওয়ায় এবারও মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
এ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ জেলার দুটি পৌরসভা ও সব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ছয়টি উপজেলা থেকে ছয়জন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে দুজনকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারবেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার ছয় উপজেলাকে সংরক্ষিত সদস্যদের দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এখানে নির্বাচনে সংরক্ষিত সদস্যদের তিনটি উপজেলার ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনার জন্য যেতে হবে। আর সাধারণ সদস্যদের প্রতিটি উপজেলার একটিতে নির্বাচনের সময়ে ভোট চাইতে হবে। সেই হিসেবে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ভোটের সীমানা হচ্ছে প্রথমটি সিরাজদিখান, শ্রীনগর ও লৌহজং। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, টঙ্গিবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে একজন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সংরক্ষিত নারী আসনে এক নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনজন। সাধারণ সদস্য পদে ১ নম্বর ওয়ার্ডে ( সিরাজদীখান উপজেলা) ছয় জন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে (লৌহজং উপজেলা) তিনজন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (লৌহজং উপজেলা) ছয়জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (টঙ্গিবাড়ী উপজেলা) সাতজন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (সদর উপজেলা) পাঁচজন এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (গজারিয়া উপজেলা) তিনজন প্রার্থী সদস্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নেত্রকোনা থেকে ভজন দাস জানান, নেত্রকোনায় জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, সদস্য পদে ৪৬ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট অসিত সরকার সজল। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির কার্যকরী কমিটির সদস্য জেলা জাতীয় কৃষক পার্টির আহ্বায়ক, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আসমা সুলতানা আশরাফ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ফরিদ খানের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির নেত্রকোনার ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ খান জ্যোতি।
এ ছাড়া জেলার ১০ উপজেলায় ১০ জন সদস্যের বিপরীতে ৪৬ জন ও তিনজন সংরক্ষিত নারী সদস্যের বিপরীতে ১৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট অসিত সরকার সজল বলেন, বিগত সময়ে দল ও মানুষের কল্যাণে কাজের মন-মানসিকতা নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে নেত্রকোনা জেলার উন্নয়নে কাজ করব। আশা করি ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
কেন্দ্রীয় জাতীয পার্টির কার্যকরী কমিটির সদস্য জেলা জাতীয় কৃষক পার্টির আহ্বায়ক আসমা সুলতানা আশরাফ বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে। আগে জেলা পরিষদের সদস্য ছিলাম। এবার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। মাঠে কাজ করছি। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমি আশাবাদী ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে নেত্রকোনাবাসীর কল্যাণে কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।
নেত্রকোনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ শেখ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
মৌলভীবাজার থেকে উমেদ আলী জানান, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে একজন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সাতজন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মিছবাহুর রহমান দলীয় মনোনয়নপত্রপত্র জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছে। তিনি একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, আওয়ামী লীগনেতা মুহিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন, এম এ রহিম সিআইপিসহ অনেকে। এদিকে এম এ রহিম মনোনয়নপত্র কিনলেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মিছবাউর রহমানকে সমর্থন করে তিনি আর তা জমা দেননি। নির্বাচনে সাত উপজেলায় তিন পদে মোট ৩৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পাঁচটি পৌরসভার মোট ভোটার ৯৫৬।
মাদারীপুর থেকে এম আর মুর্তজা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুনির চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. রহিমা খাতুনের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্য কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্রপত্র জমা না দেওয়ায় একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে তিনি বিজয়ের পথে রয়েছেন।
এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে আটজন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন, সাধারণ সদস্য পদে ১৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে আটজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ের পথে রয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৪২ জন।
ফরিদপুর থেকে সঞ্জিব দাস জানান, উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে ফরিদপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থীরা। আজ দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামিম হক, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফসহ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট তিনজন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, আজ শেষ দিনে এ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে তিনজন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সাতজন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০ জন। এ জেলায় এক হাজার ১৮৫ জন ভোটার তাদের ভোট দিয়ে একজন চেয়ারম্যান, তিনজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও নয়জন সাধারণ সদস্য নির্বাচন করবেন।