ঝিমিয়ে কাটল বিএনপির বছর
২০২০ সাল পুরো বছরে জনসম্পৃক্ত কোনো বড় কর্মসূচি ছিল না দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির। মহামারি করোনাভাইরাস ব্যাহত করেছে স্বাভাবিক ও দিবসভিত্তিক সব রাজনৈতিক কর্মসূচি।
দেশের রাজনীতির মাঠে বৃহৎ এই দলটি হতে চায় আরো সংঘবদ্ধ। বিশেষ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। এরই মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তী পালনে ১০ বিভাগীয় কমিটিসহ ২৫ কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া নতুন বছরে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জোরালো কর্মসূচির কথা বলছে দলটি।
খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপির স্বস্তি
২০২০ সালে বিএনপির বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও দলটির জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর ছিল দলীয় চেয়ারপারসন ও সা্বেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি। দেশে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ১৭ দিনের মাথায় ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তি পাওয়ার আগে ২৫ মাস কারাগারে ছিলেন বিএনপিনেত্রী। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁর মুক্তির দাবিতে মাঠের কর্মসূচি পালন ও আদালতের দ্বারস্থ হলেও কোথাও সফলতা পায়নি বিএনপি। অবশেষে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। এই মুক্তির মধ্য দিয়ে স্বস্তি ফেরে বিএনপিনেতাদের মধ্যেও।
যাদের হারিয়েছে বিএনপি
করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর বেশ কিছু নেতাকে হারিয়েছে বিএনপি। যাঁদের মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন। বিএনপির জন্য বড় একটা দুঃসংবাদ ছিল দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়ার ইন্তেকাল। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। সানাউল্লাহ মিয়া ছিলেন খালেদা জিয়া, জিয়া পরিবার ও জাতীয়তাবাদী দলের অন্যতম আইনজীবী। শুধু বিএনপি বা ২০ দলীয় জোট নয় আইনজীবী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল সর্বত্র।
এ বছর বিএনপি হারিয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও শাহজাহান সিরাজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাজা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির সাবেক সাংসদ ও পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুসহ অনেককে।
সরকার পতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ
মাঠের রাজনীতিতে বিএনপির চলতি বছর তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও সরকার পতনের দাবিতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। তবে সেটিও বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। পুলিশি তৎপরতায় অল্প সময়ে তা ভেস্তে যায়। গত ১৪ ডিসেম্বর হঠাৎ কোনো ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সুবর্ণজয়ন্তী পালনে ১০ বিভাগীয়সহ ২৫ কমিটি গঠন
করোনাকালীন মহামারির প্রকোপ চলতে থাকায় বছরের প্রায় পুরো সময় দিবসভিত্তিক দলীয় কর্মসূচিতে সময় কাটিয়েছে বিএনপি। করোনার কারণে মাঠের রাজনীতি না থাকায় বেশ কিছু আলোচনা সভা হয়েছে ভার্চুয়ালি। ‘বিএনপি কমিউনিকেশন’ এসব আলোচনা সভার আয়োজন করে। দলটির স্থায়ী কমিটির সাপ্তাহিক সভাও এখন হচ্ছে অনলাইনে। প্রতিটি সভায় সভাপতিত্ব করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই নতুন করে দল গোছানোর কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। এই সময়ে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে নতুন নেতৃত্ব আসে। এ বছর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির কলেবর বাড়ানো হলেও দুটি কমিটি এখনো আংশিক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু জেলা-উপজেলায় নতুন কমিটি করেছে দলটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির ৪০ পদ শূন্য
দেশের ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও দল গোছাতে পারেনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে। ৪০টির বেশি পদ শূন্য হয়ে আছে। গত বছরের ১৯ জুন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির দুটি শূন্য পদে জ্যেষ্ঠ নেতা সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরও স্থায়ী কমিটির এখনো তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে।
উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ
চলতি বছর করোনা মহামারির মধ্যেই বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। যদিও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ঘোষণা দিয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে দুটি সংসদীয় আসন ছাড়া সব উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। করোনার মধ্যে ঢাকা-১০, ঢাকা-১৮, ঢাকা-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। স্থানীয় সব নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে বিএনপি। যদিও অংশ নেওয়া সব কটি উপনির্বাচনে অনিয়ম, জাল ভোট, কারচুপি, হামলা-মামলার অভিযোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে শোকজ
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়। চুপিসারে শোকজের জবাব দিয়েছেন শওকত মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলন করে শোকজের জবাব ও নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন মেজর হাফিজ।