টাঙ্গাইলে সাবেক সাংসদ রানা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
টাঙ্গাইলে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা ও নিহত আওয়ামী লীগনেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। আজ সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। রানা ও তাঁর তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে হাইব্রিড নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা। তিনি বলেন, হাইব্রিড মার্কা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে টাঙ্গাইলে অন্যায়ের রাজত্ব কায়েম করেছে।
লিখিত বক্তব্যে টাঙ্গাইলে আলোচিত খান পরিবারের এই সদস্য অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা মামলা দায়ের করে তাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আর এ সুযোগে এক সময়ের গামছা মার্কার চিহ্নিত কিছু লোক আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে দলের ক্ষতিসাধন করছে।
তাঁর বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে আমানুর রহমান খান রানা বলেন, গত ১ জুন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক তথাকথিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আমি নাকি তপন রবিদাস নামের এক ব্যক্তিকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছি। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছি। তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে তপন রবিদাস নামে কোনো ছেলেকে আমি চিনি না। কখনও দেখিও নাই। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো নাটক, যার কুশীলবরা পর্দার আড়ালে রয়েছেন।
টাঙ্গাইলে হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অন্যায়ের রাজত্ব কায়েমকারী হাইব্রিড মার্কা আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি করেন সাবেক সাংসদ রানা।
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার প্রায় দুই বছর পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ আনলেন আমানুর রহমান খান রানা। সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর পরই নিহত মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার আসামিদের বিচার চেয়ে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার বাদী ও নিহত মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী নাহার আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিনেও বিচারের রায় না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা পুনরায় টাঙ্গাইলকে অশান্তির নগরীতে রূপ দিচ্ছে। সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানার নেতৃত্বে পুরো টাঙ্গাইলে আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় তৎকালীন সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এই মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পাসহ ১৪ আসামি রয়েছেন।