তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। গত বছর ৪ নভেম্বর ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি একাধারে রাজনৈতিক নেতা- উন্নয়নকর্মী এবং কর্মীবান্ধব জননেতা ছিলেন। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উভয়েরই আস্থাভাজন এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন।
তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলহাজ আব্দুল আজিজ ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও মা মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬১ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন, ১৯৬৩ সালে যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
তরিকুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৩ সালে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি তৎকালীন মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিপরীতে ফাতেমা জিন্নাহর অনুকূলে জনমত সৃষ্টির জন্য অধ্যাপক শরীফ হোসেনের সহযোদ্ধা হিসেবে গ্রামে গ্রামে গমন করেন এবং মানুষকে সংগঠিত করেন।
মহান এ নেতার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য। তিনি বহুবার কারাবরণ করেন ও নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৬৬ সালে রাজনৈতিক এক মিথ্যা মামলায় তরিকুল ইসলামকে বেশ কিছুদিন কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের জন্যে তাঁকে রাজবন্দি হিসেবে নয় মাস যশোর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্যে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতিত হন এবং বেশ কিছুদিন কারাবরণ করেন।
জাতীয় রাজনীতিতে তরিকুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রথম সারির নেতা। ১৯৭০ সালে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন তিনি। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ডাকা ফারাক্কা লং মার্চে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তরিকুল ইসলাম যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি তিন মাস কারাভোগ করেন।
তরিকুল ইসলাম ১৯৭৮ সালে তিনি যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ন্যাপ (ভাসানী) বিলুপ্ত হলে তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যশোর সদর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময়ে তিনি জাতীয়তাবাদী দলের জেলা আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালের ৫ মার্চ তরিকুল ইসলাম সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করলে তরিকুল ইসলাম কারারুদ্ধ হন এবং তিন মাস অজ্ঞাত স্থানে আটক থাকেন। অতঃপর তথাকথিত এরশাদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে নয় মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকেন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তাঁকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। ৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরিকুল ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের বিজয়ের পর ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপালনকালীন তরিকুল ইসলাম পর্যায়ক্রমে সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, তথ্য, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ষ্পষ্টভাষী ও জনদরদী রাজনীতিবিদ। আমৃত্যু তিনি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ঢাকা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ঢাকায় তিন দফা এবং যশোরে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা শেষে স্থানীয় কারবালা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
কর্মসূচি
তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে আজ সোমবার যশোরে মরহুমের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, কোরআন খতম এবং আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান। এ ছড়া মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেবেন।