পুতুল গ্রামের ইতিকথা
পুতুল বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে গ্রামকে ‘পুতুল গ্রাম’ নামে পরিচিতি এনে দিয়েছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের ৫০০ নারী কারিগর। তাদের বানানো পুতুল এখন দেশ-বিদেশে সমাদৃত।
ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, দুই বছর আগে মোয়াজ্জেম হোসেন মিজুর ‘এবি ক্রুসেড’ নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মনিকা রানী দাস নামের এক গৃহবধূ পুতুল তৈরির ধারণা নেন। পরে সুতা এনে পুতুল বানানোর কাজ শুরু করেন। এভাবে তিনি সংসারের কাজের ফাঁকে আস্তে আস্তে বাড়িতে বসে পুতুল বানিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে সরবরাহ করতে থাকেন। তার পারিশ্রমিক হিসেবে পুতুলপ্রতি বিভিন্ন অংকের টাকা পেতেন। এতে তার সংসারে অতিরিক্ত আয় যোগ হতে থাকে। তার পুতুল বানানো দেখে এলাকার নারীরাও পুতুল বানাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বর্তমানে ওই গ্রামে দুজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫০০ নারী কারিগর পুতুল তৈরি করে অতিরিক্ত আয় করছেন। যা পরিবারের আয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
আব্দুলপুর বানিয়াপাড়ার লিপা রায় বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বছর ধরে সুতা দিয়ে পুতুল তৈরি করছি। প্রথমে আমার প্রতিবেশী মনিকা দিদির কাছে এ কাজ শিখেছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি কোনো দিন দুইটা, কোনো দিন পাঁচটা পুতুলও তৈরি করি। পুতুল বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। বাচ্চারা টাকা চাইলে দিতে পারি। পুতুল বানানোর আয় দিয়ে ছাগল কিনেছি। যখন যেটা নিতে মন চায়, তখন সেটা নিতে পারি। স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হয় না।’
একই গ্রামের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ভাগ্য রানী রায় বলেন, ‘আমি এসএসসি পরীক্ষার পর আমার মায়ের কাছে পুতুল তৈরির কাজ শিখেছি। বাসার কাজে মাকে সাহায্য করি। পড়াশোনাও ঠিকমতো করি। এর ফাঁকে ফাঁকে আমি সুতা দিয়ে পুতুল বানিয়ে নিজে রোজগার করছি টাকা। সেই টাকা দিয়ে প্রাইভেট পড়ার বেতন দিতে পারছি। বাবার কাছে টাকা চাইতে হয় না।’
সুপারভাইজার ললিতা রানী রায় ও ঝর্ণা রানী রায় জানান, এবি ক্রুসেড প্রথমে বিভিন্ন ধরনের পুতুলের নমুনাসহ সুতা ও তুলা সরবরাহ করে থাকে। সেই নমুনা আমরা কারিগরদের হাতে দিলে তারা তা দেখে যতগুলো পুতুলের চাহিদা থাকে, তা তৈরি করে এবি ক্রুসেডে সরবরাহ করা হয়।
তারা আরও জানান, প্রতিটি পুতুল তৈরির মজুরি ১৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা থাকে। একজন কারিগর সংসারের কাজ সামলিয়ে প্রতিদিন তিনটি পর্যন্ত পুতুল বানাতে পারে।
এবি ক্রুসেডের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন মিজু জানান, চিরিরবন্দরে বর্তমানে দুজন সুপাইভাইজারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫০০ কারিগর সুতার পুতুল তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। তাদের তৈরি পুতুল দেশের বাইরে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।
মিজু এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েকজন সুপারভাইজারের মাধ্যমে এ পেশাকে সম্প্রারিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।