বাউল রণেশ ঠাকুরের ঘর নির্মাণে সহায়তা দিলেন লন্ডনপ্রবাসী
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাউলশিল্পী রণেশ ঠাকুরের গানের আসরঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর সেই ঘর নির্মাণে সংগীতশিল্পী আশিকের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করলেন লন্ডনপ্রবাসী নজরুল ইসলাম।
বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের আসরঘর পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার লন্ডনপ্রবাসী নজরুল ইসলাম শিল্পী আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আজ শুক্রবার শিল্পী আশিক বিকেল ৫টার দিকে রণেশ ঠাকুরের গ্রামের বাড়ি উজানধল গ্রামে গিয়ে ঘর নির্মাণের জন্য নগদ এক লাখ টাকা শিল্পীর হাতে তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ছেলে বাউল নূরজালাল, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আশিকুর রহমান আশিক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ধ্রুপদ চৌধুরী আশিক, অর্থদাতা নজরুল ইসলামের ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম, দিরাই শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি আপেল মাহমুদ, কণ্ঠশিল্পী মৃণাল বাবু, আশিষ দাস প্রমুখ।
সংগীতশিল্পী আশিক বলেন, ‘রণেশ ঠাকুরের ঘর পুড়ে যাওয়ার খবর শুনে খুব আহত হই। ২০২০ সালেও প্রাচীন যুগের বর্বরদের মতো দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে তাঁর গানের আসরঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য খবুই আতংকের। এই খবরটি আমরা ফেইবুক দেই এবং প্রতিবাদ জানাই। পরে সারা দেশের মানুষ এমন ঘটনার নিন্দা জানান। আমার ফেসবুকে এই খবর দেখে লন্ডনপ্রবাসী নজরুল ইসলাম মর্মাহত হন এবং উনি সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি পুড়ে যাওয়া ঘর নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে উনার সেই প্রতিশ্রুত আর্থিক সহযোগিতা পাঠান। আজকে আমরা বাউল রণেশ ঠাকুরের হাতে নগদ এক লাখ টাকা তুলে দেই।’
আশিক আরো বলেন, ‘এ সময় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূরজালাল ভাইও সঙ্গে ছিলেন। আমরা এই টাকা দেওয়ার মাধ্যমে বাউল শিল্পীদের কোনো করুণা করিনি। আমরা সব অপশক্তিকে বুঝিয়েছি আমরা শিল্পীরা, বাউলরা একপ্রাণ। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি।’
বাউল রণেশ ঠাকুর বলেন, ‘আমরা ঘরটি পুড়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি মুগ্ধ। সবাই আমাকে ভালোবাসে, গানকে ভালোবাসে। বাউল গান ভালোবাসে। আজকে আশিক ভাইয়ের মাধ্যমে আমার লন্ডনের নজরুল ভাই নগদ এক লাখ টাকা দিলেন ঘরটি বানানোর জন্য। এর আগে জেলা প্রশাসক মহোদয়, ইউএনও মহোদয়, শিল্পকলা একাডেমী, আমার বন্ধুবান্ধব সবাই এগিয়ে এসেছেন। আমি সত্যি খুব খুশি। তবে সব বাউলশিল্পী এবং অন্য শিল্পীদেরও বিপদের সময় সবাই এগিয়ে আসবেন এই কামনা করি। মানুষের জয় হোক, বাউল গানের জয় হোক।’
এর আগে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন নগদ ২০ হাজার টাকা ও তিন বান্ডিল ঢেউটিন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে নতুন একটি ভালো মানের দোতরা, একজোড়া মন্দিরা, একটি ডপকি, একটি নোটবুক, কলম উপহার দেওয়া হয়েছে। একই সময় রণেশ ঠাকুরের হাতে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর দেওয়া ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
গত ১৭ মে রোববার রাতে রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা তাঁর গানের আসরঘরটি পুড়িয়ে দেয়। তাঁর বসতঘরটি টিনের চালার পাকা ঘর। গভীর রাতে শব্দ শুনে তিনি বের হয়ে দেখেন আসরঘরে আগুন জ্বলছে। এই ঘরটিতে কেউ না থাকলেও এটিতে তাঁর কিছু বাদ্যযন্ত্র ও গানের খাতা ছিল। রণেশ ঠাকুর না বললেও স্থানীয় সাংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন এটি পরিকল্পিত। যারা নানা সময়ে শাহ আবদুল করিমকে তাঁর গানের চর্চায় বাধা দিয়েছে, তারাই রণেশ ঠাকুরের গানের আসরঘরে আগুন দিয়েছে।
আগুনের ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে দিরাই থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন রণেশ ঠাকুর। এর পর রাতেই পুলিশ উজানধল গ্রামের এলাম উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ আহমদকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।