বিদ্যুৎ বিলের জন্য সুনামগঞ্জের পৌরশহরে মাইকিং
পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই সময়ে বাংলাদেশেও দিনে দিনে এই করোনা মহামারি সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। সরকার করোনা মোকাবিলায় প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন ঘরে থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যস্ত তখন সুনামগঞ্জ পৌরশহরের এলাকায় এলাকায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ মাইকিং করেছে।
রোববার বিকেলে পৌরশহরের ঘোলঘর, কাজির পয়েন্ট, তেঘরিয়া ও বড়পাড়া এলাকার ওই মাইকিংয়ে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুতের সব বিল পরিশোধের জন্য। যারা বিল পরিশোধ করবেন না তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার ঘোষণাও দেওয়া। হঠাৎ এমন মাইকিং শুনে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছে, দীর্ঘ দিন লকডাউন থাকার পর কয়েক দিন আগে লকডাউন খুলে দেওয়া হয়েছে। এখনো এক মাসও হয়নি। সবার হাতে টাকাপয়সাও নেই। বেশির ভাগ মানুষ কর্মহীন হয়ে আছে। অনেকেই কাজে যোগ দিতে পারেনি। যারা করেছেন তারাও আগের অনেক কাজ রয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের মাইকং মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ যেখানে খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে সেখানে বিদ্যুৎতের বিলের জন্য এমন তাগাদা হতাশাজনক। আর সরকার মানুষকে ঘরে থেকে নিরাপদে থেকে এই মহামারির মোকাবিলা করতে বলছে সেখানে এমন ঘোষণা অমানবিক।
তবে সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইকরাম হাসান চৌধুরী মোবাইল ফোনে বলেন, শহরের কিছু অংশে মাইকিং করা হচ্ছে সত্যি। তবে যারা দীর্ঘদিনের বকেয়া জমিয়ে রেখেছেন তাদের বলা হয়েছে। যারা দুই তিন মাসের বকেয়া রয়েছে তারা আতঙ্কের কারণ নেই। কারণ এর আগে কোনো দিন দুই তিন মাসের বিলের জন্য কারো বাড়ির সামনে মই নিয়ে যাওয়া হয়নি বা সংযোগ বিছিন্ন হয়নি। যারা দীর্ঘদিন বিল বকেয়া করে রেখেছেন তারা জানে তাই দুই-তিন মাসের বিল বকেয়া হলে সমস্যা হবে না।
সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. জুয়েল মিয়া আহমদ বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিদ্যুৎ বিভাগের মাইকিং শুনি, এতে সব গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়। বিল না দিলে সংযোগ বিছিন্ন করা হবে বলেও মাইকিংয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। এমন মাইকিং শুনে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমার মনে হয় মানুষের মানবিক দিক বিবেচন করে দেখা দরকার।
অ্যাডভোকেট জাবেদ নূর বলেন, ‘আমরা দেখেছি এই করোনা মহামারি শুরুর পরে মানুষের ব্যক্তিগত বাসাভাড়াও মওকুফ করতে বলা হয়েছে। সব কিছুর পরে মানবিক দিক বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। বাসার মালিকদের বাসা ভাড়া না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য এমন মাইকিং অমানবিক লেগেছে। আমি আমার ঘোলঘর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মাইকিং শুনেছি।’
সুনামগঞ্জ সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ বলেন, ‘এমন মহামারির সময় এই ধরনের মাইকিং হওয়ার সুযোগই নাই। যেখানে সাধারণ মানুষ খাবার জোগাড় করতে সংগ্রাম করছে, সরকার যেখানে মানুষকে প্রণোদনা দিচ্ছে। সরকার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে সুনামগঞ্জ শহরের নাগরিকদের বিল দিতে মাইকিং খুবই অমানবিক। এই মহামারির সময় খুব অল্প সংখ্যক মানুষের সামর্থ্য আছে কিন্তু বিশাল অংশ করোনার সাথে খাবার আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। সেখানে এমন মাইকিং জোর করে বিল আদায় করার মতো। আবার সংযোগ বিছিন্ন করার কথা বলে আমাদের দরিদ্রতাকে পরিহাস করা হচ্ছে। এটা কাম্য নয়।
এনাম আহমদ বলেন, ‘আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানাব এই মহামারির কথা চিন্তা করে সরকার গত তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে দিবে।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আমরা পৌরসভার মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। সেই দিক থেকে সরকারের রাজস্বেরও দরকার আছে। তবে আমার জানা মতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পৌর শহরের সব নাগরিকের পুরো বিল পরিশোধের সামর্থ্য নেই। শহরের বেশির ভাগ এলাকার অভিযোগ আছে, বৃষ্টির মৌসুম শুরুর পর থেকে অনেক সময় বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না। তাই আগে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। তার পর বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া দরকার।’
বিরোধী দলীয় হুইপ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘করোনার মতো এমন সময়ে মানুষ যখন ঘরে বসে এই করোনা মহামারি মোকাবিলা করছে তখন আমার মনে হয় জনগণের মানবিক দিক ও সামর্থ্য বিবেচনা করে বিল আদায় করা উচিত হবে। অনেক মানুষ কর্মহীন আছেন অনেক মানুষ আধা কাজে আছেন তাই আমার মনে হয় সব কিছুই দেখা দরকার।’