মোংলায় করোনার মধ্যে ইউপি নির্বাচন চায় না সাধারণ জনগণ
হঠাৎ করে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করায় মোংলায় চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, দ্বিতীয়বারে আরও এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এমন অবস্থায় আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট গ্রহণ চায় না সাধারণ জনগণ।
ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণায় এখানকার সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে ঘরে ঘরে।
সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে এমন সময়ে নির্বাচন করতে নারাজ উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘মোংলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। তাই এরই মধ্যে একটা নির্বাচন হলে সেটি হবে খুবই আশঙ্কাজনক এক পরিস্থিতির। তাই এই আশঙ্কার কথাটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
করোনার মধ্যে নির্বাচন যাতে না করা হয়, খুব শিগগিরই এর বিষয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলেও আশা করেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার।
ভৌগোলিক আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোংলা বন্দর। একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বসবাস প্রায় দুই লাখ মানুষের। ঘনবসতিপূর্ণ এ উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলাটি এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। সর্বোচ্চ আক্রান্তের হার শতকরা ৭১ ভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখানে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। তাই উপজেলার বাসিন্দারা অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আগামী ২১ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আব্দুল মজিদ, মো. খোকন ও আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধিনিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন! এটাতো মরণ ডেকে আনা।
উপজেলার আরেক ইউনিয়ন চিলার বাসিন্দা কুলসুম বেগম ও জাহানারা খানম বলেন, করোনার মধ্যে কিভাবে নির্বাচন হয়? এতে আরও বেশি করোনা হবে।
এই সময়ে নির্বাচনের দরকার নেই বলেও দাবি তোলেন তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ বলেন, ‘ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে একটা উৎসব। নির্বাচনের সময় চায়ের দোকানে, মাঠেঘাটে সবাই গায়ে গায়ে মিশে একাকার হয়ে যাবে। করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে মোংলায় নির্বাচন দেওয়া হলে যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে তা মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।’
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের খবরে কিছুটা প্রচার-প্রচারণার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রার্থীরা। চলমান বিধিনিষেধ চলায় তাই ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আছেন। তাই এখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইউনিয়ন ছয়টিতে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছে ৭৯ হাজার ৫৪০ জন।