রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ শুরু
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিসহ নয়টি দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ডাকা রংপুর বিভাগের গণসমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ আগেই শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে লাখো জনতার উপস্থিতিতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন আর রশিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
সমাবেশের শুরুতেই স্থানীয় বিএনপি এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিএনপির শীর্ষনেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুইদিন ধরে চলা পরিবহণ ধর্মঘট ও নানা বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে রংপুরসহ আশেপাশের জেলার নেতাকর্মীরা আগে থেকেই সমাবেশস্থলে চলে আসেন। সকালের আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের পর মিছিল নিয়ে এসে নেতাকর্মীরা মাঠের আশাপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত জনতরঙ্গ তৈরি হয় সমাবেশস্থল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ জনতার এ ঢেউ মাঠ ছাড়িয়ে আশাপাশের সড়ক ও এলাকায় আছড়ে পড়ে।
বিএনপির আজকের সমাবেশ ঘিরে গোটা রংপুর শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। সকাল থেকে বিএনপি নেতারা সমাবেশস্থল স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তুলেছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তারা এ স্লোগান দিচ্ছেন।
দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল থেকেই স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিয়ে সমবেত জনতাকে উজ্জীবিত করে রাখেন। নেতারা ক্ষমতাসীন সরকারকে ভোট চোর ও রিজার্ভ চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এ সরকার জনগণের ভোটে নয়, রাতের বেলায় ‘ইবলিশ’এর ভোটে নির্বাচিত। জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশ পাচার করে দেশকে রিজার্ভ শূন্য করে ফেলেছে। দেশের অর্থ-সম্পদ এ সরকারের লোকেরা গিলে খেয়ে ফেলেছে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায়ের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পরই বিএনপি ঘরে ফিরে যাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেন নেতারা।
রংপুরের গণসমাবেশের মঞ্চেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য খালি চেয়ার রাখা হয়েছে। রংপুর নগরীর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ মঞ্চের ঠিক মাঝখানে সবুজ তোয়ালে দিয়ে আবৃত একটি ফাঁকা চেয়ার দেখা যায়। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার গণসমাবেশেও খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার খালি রাখা হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ১০ বিভাগে গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রথম কর্মসূচি পালন করে। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে। সর্বশেষ ২২ অক্টোবর খুলনায় গণসমাবেশ করে বিএনপি। আজ রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি শেষ হবে। এরপর নতুন কর্মসূচি আসবে বলে জানান বিএনপি নেতারা।