রাঙামাটিতে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ফুফার বিরুদ্ধে, ৫ লাখে ‘মিটমাট’
রাঙামাটিতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর ‘পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ’ দিয়ে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শহরের কে. কে. রায় সড়ক এলাকায় কিশোরীর ফুফুর বাসায় এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর চারদিন পর গতকাল রোববার ২৮ মার্চ শহরের বনরূপার হ্যাপির মোড় এলাকায় অবস্থিত নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘প্রোগ্রেসিভ’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে পাঁচ লাখ টাকায় ঘটনাটি মিটমাট হয়। অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য। চুয়াডাঙ্গা জেলায় কর্মরত জুয়েল ছুটিতে রাঙামাটি আসেন।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানিয়েছে, জুয়েল চাকমা তার ফুফা। গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে রাঙামাটির ভাড়া বাড়িতে আসে। ফুফু চাকরির কারণে সেদিন বিলাইছড়িতে অবস্থান করছিলেন।
কিশোরীটির বক্তব্য, ‘রাত ১০টার দিকে রাতের খাবার শেষে ফুফা চুয়াডাঙ্গা থেকে আনা বেলের শরবত খাওয়ায়। আমি ও আমার ফুফাত বোন এটি খাই। এটি খাওয়ার পরপরই মাথা ঘুরালে আমার কক্ষে যাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ২টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে নিজেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাই। লাইট জ্বালানোর পর ফুফাকে দেখি।’
কিশোরী জানায়, পরদিন পাশের বাড়িতে তার স্কুল শিক্ষিকার কাছে বিষয়টি খুলে বললে তিনি কিশোরীর মা-বাবাকে খবর দেন। এ ঘটনার জন্য জুয়েলের শাস্তি দাবি করে কিশোরীটি।
স্কুলশিক্ষিকা প্রতিষ্ঠা চাকমা বলেন, ‘গত ২৬ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য খুব সকালে মাঠে চলে যাই। দুপুরে ঘরে ফিরে আমার মেয়ের কাছে ঘটনাটি শুনে তাকে (ভুক্তভোগী কিশোরী) ডেকে বিষয়গুলো জেনেছি। ভুক্তভোগী কিশোরীটি আমার মেয়ের সহপাঠী। পরে তাদের পারিবারিক সমঝোতা হয় বলে জেনেছি। আমাদের আর কোনো কিছু বলা হয়নি।’
অভিযুক্ত জুয়েল চাকমা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি পারিবারিক বিষয়, পারিবারিকভাবেই বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বলেন, ‘রোববার রাতে রাঙামাটি শহরের চম্পক নগর মোড়ে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অফিসে সালিশ হয়। সালিশে জুয়েল তার দোষ স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর দায়িত্বভার নেয়। মেয়ের নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। একদিকে আত্মীয় আর আমরাও গরিব মানুষ। তাই মেনে নিয়েছি। কী আর করব।’
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) রাঙামাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান এই সালিশের কাগজপত্র লেখালেখির করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা। তবে অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘যারা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, তারাই এটি করেছে, আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে মাত্র। ওখানে নারী নেত্রী সুগন্ধী চাকমা ও অনিতা দেব বর্মণ ছিল বলে শুনেছি। আমি কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট নই।’
নারী নেত্রী সুগন্ধী চাকমা বলেন, ‘মেয়ের পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। যেহেতু তারা উভয়ে আত্মীয়। আমরা তো কোনো সমাধান দিতে পারি না। আমরা শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র। ওখানে মেয়ের দাদু উপস্থিত ছিলেন, তিনিই সমাধান দিয়েছেন, যেটি হলো মেয়েটি অন্য কোথাও থাকবে আর মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে মোট পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে।’
প্রোগ্রেসিভের প্রধান নির্বাহী সুচরিতা চাকমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
রাঙামাটি কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনার কোনো অভিযোগ রোববার রাত অবধি থানায় আসেনি।