রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পরিবহণ ধর্মঘট শুরু
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহণ মালিক সমিতি।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী সড়ক পরিবহণ গ্রুপ কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর এ ঘোষণা দেন।
এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশ কমিটির সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘সমাবেশে যেন নেতাকর্মীরা আসতে না পারে, সে জন্য রাজশাহী বিভাগে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ধর্মঘট দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে রাখা যাবে না। যে কোনো মূল্যে এই গণসমাবেশ সফল করা হবে।’
বিএনপির গণসমাবেশকে আটকাতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে দলটির নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বলেন, ‘গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি কাকতালীয়। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের এই কর্মসূচির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
সাফকাত মঞ্জু বলেন, ‘মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।’
সাফকাত মঞ্জু আরও বলেন, ‘এ ধর্মঘটের আওতায় থাকবে সব যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহণ। তবে, এরই মধ্যে যদি দাবির পক্ষে আশ্বাস পাওয়া যায়, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।’
গত শনিবার নাটোরে বিভাগীয় পরিবহণ মালিক—শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভায় ১০ দফা দাবি আদায়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর তারা বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছে তাদের দাবি পূরণে স্মারকলিপি দেয়।
১০ দফা দাবিগুলো হলো-
১। সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে।
২। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে।
৩। জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে।
৪। করোনাকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ে ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে।
৫। সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে।
৬। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সবিষয়ক নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে।
৭। পরিবহণের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৮। উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
৯। মহাসড়কে হাট—বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে।
১০। যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।
এদিকে, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিএনপি নেতাদের দাবি, অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতে এই পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।