‘রিজার্ভ চুরির পর গোটা দেশটাই গিলে খেতে চায় সরকার’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ডাকা রংপুর বিভাগের গণসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ভোট চোর ও রিজার্ভ চোর আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। রিজার্ভ গিলে খাওয়ার পর এখন গোটা দেশটাই গিলে খেতে বসেছে সরকার।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিসহ নয়টি দাবিতে আজ শনিবার রংপুর শহরের কালেক্টরেট মাঠে সমাবেশে দলটির নেতারা এ বক্তব্য দেন।
অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে চলা পরিবহণ ধর্মঘট ও নানা বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে রংপুরসহ আশেপাশের জেলা থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন। সকালের আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের পর মিছিল নিয়ে এসে নেতাকর্মীরা মাঠের আশপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন।
তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মী) এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন? আমাদের সোজা কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নাকি বিরোধীদল ও জনগণকে ভয় পায় না। ভয় যদি না পাও, তাহলে কেন দুই দিন ধরে পরিবহণ বন্ধ করে দাও। কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মার?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি নাকি চিবিয়ে খাই। আরে আপনারা তো চিবিয়ে চিবিয়ে অর্থনীতিটা খেয়ে ফেলেছেন। এখন দেশটা খেয়ে ফেলবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প করে একটা ঘর দেয়, ওখানেও চুরি করে। আমাদের এই সরকার সর্বভোগে পরিণত হয়েছে। সব খেয়ে ফেলতে চায়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয় না। আমাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা। ৩৫ লাখ মামলা। ৬০০ নেতাকর্মী গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষ হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
জনস্রোত দেখে সরকারের কম্পন ধরে গেছে : হারুন অর রশিদ
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াইয়ে নেমেছে। কেউ তাদের থামাতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের এ জনস্রোত দেখে সরকারের কম্পন ধরে গেছে
বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে শুভেচ্ছা। আওয়ামী লীগ বলছে খেলা হবে। তারা বলছে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে নাকি খেলা হবে। আমি বলবো বাংলাদেশের মানুষতো গত ১৫ বছর ধরেই খেলা দেখছে। দিনের ভোট রাতে করে বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছেন। বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী যিনি বার বার নির্বাচিত হয়েছেন, গণতন্ত্রের মা, আমাদের মাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রেখেছেন।
জনগণ বাধা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না : সেলিমা রহমান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণ যদি জেগে উঠে, তাদের বাধা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আপনার চেষ্টা করছেন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে। আপনারা আজকে ক্ষমতার কথা বলছেন, ২০১৪ সালে কি ভোট হয়েছিল, বুকে হাত দিতে বলতে পারবেন? সেই নির্বাচনে কুকুর বিড়াল ভোটকেন্দ্রে ঘুমিয়ে ছিল।
আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে : হেলেন জেরিন
মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনকে আরও বেগবান করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের মরার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাদের মরণ আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই সরকারের পতন আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) কি আর ঘরে থাকবেন? বাংলাদেশের মানুষ কি আর ঘরে থাকবে? কেউ ঘরে থাকবে না।
বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাব : আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। শেখ হাসিনা, তাদের নেতা-মন্ত্রীদের কথা বিশ্বাস করেন না। আপনার এসব কথার উত্তর দিবেন না। বিএনপি যদি এর উত্তর দেয়, তাহলে বিএনপির মান-সম্মান যাবে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাব না দিয়ে নিজেদের পথে চলার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আমাদের উত্তর হবে বিপ্লব। আমরা যে পথে চলছি, আগামীদিনে বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাব। ওরা বলতে থাকবে, আমরা চলতেই থাকব। জাতীয় সরকার গঠন করে, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে।
আমীর খসরু আরও বলেন, তাদের নাকি টাকা নাই। তেল আমদানির টাকা নাই। আওয়ামী লীগ পুরোপুরি মিথ্যাচার করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজকে খাদে পড়ে গেছে। দেশের মানুষ আজকে জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছে। দুর্ভিক্ষ আসার আগে আপনাকে বিদায় করে দিব। ১৯৭১ সালের আগে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। আপনাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।