রূপপুর প্রকল্পের এমডির গাড়িচালককে হত্যার অভিযোগে বন্ধু গ্রেপ্তার
পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের নিকিম কোম্পানির পরিচালকের গাড়িচালক সম্রাট হোসেনকে (৩০) হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাঁর বন্ধু আব্দুল মমিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)-৩। গতকাল রোববার (২৬ মার্চ) দিনগত রাতে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব ৩-এর সদস্যরা।
গ্রেপ্তার করা মমিনের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়া (দোকানপাড়া) গ্রামে। নিহত সম্রাটের বাড়িও একই উপজেলার মধ্য অরনকোলা রিফুজি কলোনি এলাকায়। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত দুজন আসামি গ্রেপ্তার হলেন। এর আগে মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল তাঁকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
র্যাব-১২, সিরাজগঞ্জের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সম্রাটের বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় গত শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সম্রাটের বন্ধু মমিনকে এক নম্বর এবং তাঁর স্ত্রী সীমাকে দুই নম্বর আসামিসহ আরও তিন থেকে চার জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আসামি মমিন আত্মগোপনে চলে যান। পলাতক এজাহার নামীয় আসামি মমিনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১২, সিরাজগঞ্জের একটি দল, র্যাব ৩-এর সহযোগিতায় ঢাকার হাতিরঝিল থানার বাংলামোটর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মমিনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১২ এর অধিনায়ক মারুফ হোসেন আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মমিনকে আজ সোমবার ঈশ্বরদী থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন আইনগত প্রক্রিয়া তারা করবে।
র্যাব জানায়, নিহত সম্রাট প্রায় তিন বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকিম কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউরি ফেদারোপের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে ডিউটি শেষে বাড়িতে ফেরত যেতেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ডিউটি শেষে বাড়িতে না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইলফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পায়।
পরের দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) নিকিম কোম্পানির অন্য চালকদের কাছে সম্রাটের বাবা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান, তিনি ২৩ মার্চ রাত ৮টা ১০ মিনিটে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ডিউটি শেষ করে অফিসের প্রাডো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। তখন পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানতে পারে তিনি বাঁশেরবাদা মধ্যপাড়ায় তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু আব্দুল মমিনের বাসায় গিয়েছিলেন। পরে তারা মমিনের বাসায় গিয়ে তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী সীমা খাতুনের কাছে সম্রাটের ব্যাপারে জানাতে চান। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে গত শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ঘাট থেকে পুলিশ একটি সাদা জিপ গাড়িসহ চালক সম্রাটের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। এর আগে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
সীমা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্রাট গাড়ি নিয়ে বন্ধু আব্দুল মোমিনের বাড়িতে যান এবং তাঁর মাথা ব্যথা করছে জানিয়ে মোমিনের বিছানায় শুয়ে পড়েন। আর বন্ধু আব্দুল মোমিনকে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে পাঠান। এ সময় সীমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সম্রাট। তখন তিনি ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে সম্রাটের মাথায় আঘাত করে তাকে গুরুতর আহত করেন। মোমিন ওষুধ নিয়ে বাসায় ফিরে অবস্থা বেগতিক দেখে এবং তাঁর কাছ থেকে সব শুনে আহত সম্রাটকে বস্তায় ভরে গাড়িতে তুলে চলে যান। এই সময় সম্রাট বস্তার ভেতর গোংরাতে থাকেন। তখন তাঁরা গাড়িতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে সীমাকে পাবনা সদরের মাধপুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে বস্তাবন্দি মরদেহ নিয়ে গাড়িসহ মোমিন চলে যান।
গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে সম্রাট হত্যায় জড়িত অভিযোগে সীমা খাতুনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুলে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক মো. শামসুজ্জামান। দুই দিনের রিমান্ড শেষ হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।