শিশু-কিশোরদের সর্বোচ্চ অপরাধেও শাস্তি ১০ বছর
বরগুনার বহুল আলোচিত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ (২৬) হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোর আসামির রায় কিছুক্ষণ পরে ঘোষণা করা হবে। আজ মঙ্গলবার বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন। তবে এসব আসামির বিচার হবে শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী।
রায়ে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত হওয়ার মতো কোনো অপরাধ করলেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ১০ বছর। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন হওয়ার মতো কোনো অপরাধ ছাড়া অপর কোনো অপরাধ করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে তিন বছর।
শিশু আইন ২০১৩-এর ৩৩ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করা যাইবে না।’
এ আইনের ৩৪ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়, ‘কোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হইলে শিশু-আদালত তাহাকে অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে আটকাদেশ প্রদান করিয়া শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখিবার জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।’
তবে শর্ত থাকে যে, ‘কোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় নয় এমন কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হইলে শিশু আদালত তাহাকে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে আটকাদেশ প্রদান করিয়া শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখিবার জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।’
(২) উপধারায় বলা হয়, ‘শিশু আদালতের আদেশে অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, আটকাদেশপ্রাপ্ত শিশুর আচরণ, চারিত্রিক ও ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিলে এবং হত্যা, ধর্ষণ, দস্যুতা, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা বা অন্য কোনো জঘন্য, ঘৃণ্য বা গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত না হইলে, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বা প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ শিশুর বয়স ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ হইবার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট শিশুকে মুক্তি প্রদানের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ হইবার অন্যূন ৩ (তিন) মাস পূর্বে, সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে।’
(৩) উপধারায় বলা হয়, ‘হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দস্যুতা বা মাদক ব্যবসা বা অন্য কোনো গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত শিশুর বয়স ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ হইলে এবং মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকিলে অথবা উল্লিখিত অপরাধের মামলায় আদালতের আদেশ অনুযায়ী আটকাদেশপ্রাপ্ত শিশুর বয়স ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ হইলে, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বা প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, শিশু-আদালতের অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে কেন্দ্রীয় বা জেলা কারাগারে প্রেরণ করিবে।’
(৪) উপধারায় বলা হয়, ‘কারাগার কর্তৃপক্ষ উপধারা (৩) এর অধীন প্রেরিত ব্যক্তিকে, কারাগারে অবস্থানরত অন্য কোনো আইনের অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন আসামিদের হইতে পৃথক করিয়া ভিন্ন ওয়ার্ডে রাখিবার ব্যবস্থা করিবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাহার আটকাদেশের মেয়াদ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আটকাদেশের অবশিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অবস্থান করিবেন।’
(৫) উপধারায় বলা হয়, ‘কোনো শিশুর বিচার প্রক্রিয়া ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ হইবার পর সমাপ্ত হইলে এবং বিচার সমাপ্তির পর তাহাকে আটকাদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত শিশুকে শিশু-আদালত সরাসরি কেন্দ্রীয় বা জেলা কারাগারে প্রেরণ করিবে।
বরগুনার বহুল আলোচিত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ (২৬) হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোর আসামির রায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। সকালে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোরকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আট কিশোর জামিনে থেকে নিজেরাই আদালতে হাজির হয়। অপর ছয় আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে পুলিশ কারাগার থেকে হাজির করে। আজ মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হবে। বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন।
রায়কে ঘিরে সকাল থেকে বরগুনা জেলা দায়রা আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় দুই ভাগে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ভাগে সম্পন্ন হয় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার। দ্বিতীয় ভাগে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচার শুরু হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের রায় দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। ওই দিন রায়ে মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়। চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
রায়ের আগে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। আর মো. মুসা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন। যদিও মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়নবন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। শিশু আদালতের মামলায় মোট ৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আজ যাদের রায় ঘোষণা করা হবে
গত ১৪ অক্টোবর রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক এবং ৭৪ জনের সাক্ষ্য উপস্থাপনের পর ২৭ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন আদালত। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে কারাগারের শিশু ওয়ার্ডে রয়েছে ছয়জন। আট আসামি তাদের আইনজীবীর জিম্মায় জামিনে রয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনার নারী ও শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এনটিভি অনলাইনকে গতকাল বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী এ মামলার যুক্তিতর্কের অবশিষ্ট অংশ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর যুক্তিতর্ক শেষ হলে আদালত ২৭ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে এ মামলায় জামিনে থাকা আট আসামিকে নিজ নিজ আইনজীবীর জিম্মায় ফের জামিন মঞ্জুর করা হয়।’