সরকারি দলের চুনুপুঁটিরাও রুই-কাতলা হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারি দলের চুনুপুঁটিরাও রুই-কাতলা হয়ে গেছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা গরিব থেকে আরও গরিব হয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা এখন পর্যন্ত সরকার কীভাবে পরিবর্তন করব সেটাই ঠিক করতে পরলাম না।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় হলরুমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দাবিতেই আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। চারটা নির্বাচনও সুন্দরভাবে হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর যখন বুঝতে পারলো জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যখন বুঝতে পারলো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে গোটা বাংলাদেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে, অস্থিতিশীলতার মধ্যে আছে। বিএনপি সরকার পতনের আন্দোনের ডাক দিয়েছিল কিন্তু সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, বিডিআর ব্যবহার করে ভয়ংকরভাবে হত্যা করে সেই আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। সরকার রাজনীতি করার কোনো সুযোগ রাখছে না। মিটিং, মিছিল, প্রতিবাদ করার সুযোগ পর্যন্ত নাই। কেউ কথা বলতে পারবে না, কথা বললেই তার বিরুদ্ধে মামলা।’
দেশের মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির সংকট না, পুরো জাতির সংকট। পুরো জাতির ক্রান্তিকাল। এই সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। গোটা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
করোনা নিয়ে সরকারের তালবাহানার কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার করোনা নিয়ে ব্যবসা করেছে। ২০ টাকার মাস্ক কিনেছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। টিকা না পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের দুর্নীতি দায়ী। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করছে। আমরা কখনও শুনিনি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর দুর্নীতি করেছে। তারা নিয়োগ বাণিজ্য করেন। কিন্তু এখন করতেছেন কারণ সেখানে এখন আওয়ামী লীগের লোকদের নিয়ে গিয়ে বসাচ্ছে।’
পুলিশ প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতি সম্পর্কে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমরা যাবো কোথায়? যে পুলিশের কাছে আমরা যাই চোর-ডাকাত ধরার জন্য, ওরাই এখন চোর-ডাকাত হয়ে বসে আছে। আজকে গণতন্ত্রের যে সংকট, এ সংকট শুধু বিএনপির না; সবার। আজকে যে আওয়ামী লীগ লুটপাট করছে এটা প্রতিরোধ না করতে পারলে দেশ তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আজকে তাবেদার সরকারে পরিণত হয়েছে। একটা পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। সংগঠন ও জনগণের কোনো বিকল্প নেই। জনগণ জেগে উঠলে সবাই পালাতে বাধ্য হবে। সেই জনগণকে জাগায়া তুলতে হবে। সেটার দায়িত্ব হচ্ছে বিএনপির। ইনশাল্লাহ শক্তি নিয়ে এই দানব সরকারকে সরাতে সক্ষম হবো। দেশটা পুরোপুরি জেলখানা হয়ে গেছে। আমরা সবাই জেলের মধ্যেই আছি। আসুন আমরা সাবাই মিলে এই জেলটাকে একবার ভাঙার চেষ্টা করি। একটু মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সরকারের নানা ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়ে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সম্পর্কে সরকার অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে, তার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কথা বলে। আরে জিয়াউর রহমান ঘোষণা না দিলে তো মুক্তিযুদ্ধই শুরু হতো না। জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে যুদ্ধ না করলে এই দেশ স্বাধীন হতো না, এটাই বাস্তবতা। এ সমস্ত কটূক্তি করা বাদ দেন মিথ্যাচারিতা বাদ দেন। মানুষের সমস্যা সমাধান করার দিকে আসেন। এখনও সময় আছে পদত্যাগ করেন ব্যর্থতার জন্য এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে রক্ষা করেন। দেশের মানুষকে রক্ষা করেন তা না হলে এই মানুষ আপনাদের ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে নামাবে।’
এ সময় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈয়মুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ অন্যরা। এছাড়া বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।