সাক্ষ্যে যা বললেন মডেল তিন্নির চাচা
২০০২ সালের ঢাকার কেরাণীগঞ্জে মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম। আজ বুধবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।
তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম সাক্ষ্যে বলেন, “অভি তিন্নির স্বামী পিয়ালকে একদিন ডেকে আনেন। তখন অভি বলে, ‘তুমি তিন্নিকে ছেড়ে দাও। আমি তিন্নিকে বিয়ে করব।’ এরপর অভি পিয়ালকে বাসা থেকে বের করে দেন। এর পর থেকে অভি আর তিন্নি একই বাসায় থাকতে শুরু করেন।”
তিন্নির চাচা সাক্ষ্যে আরও বলেন, ‘সম্ভবত ১০ থেকে ১৫ রোজার মধ্যে তিন্নি আমাদের কলাবাগানের বাসায় এসেছিল। ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাসায় অবস্থান করে। তাকে সেদিন খুব অস্থির দেখায়। তিন্নি যাওয়ার আগে আমাকে বলে, সে অভির সঙ্গে পার্টিতে যাবে। পরে তিন্নি বাসা থেকে চলে যায়। তিন্নি বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের বাসার গৃহকর্মী বীনা বাসায় আসে। তখন তিন্নি কোথায়? তা জানতে চায়। অভি তিন্নিকে খুঁজছে বলে জানায় বীনা। এরপর তাঁরাও তিন্নির খোঁজ করতে শুরু করেন। কয়েক দিন পর পত্রিকায় তিন্নির মরদেহের ছবি ছাপা হয়। যা আমি দেখেছি।’
রেজাউল করিম সাক্ষ্যে বলেন, “তিন্নি নিখোঁজ হওয়ার পরদিন অভি তাদের বাসায় আসে। অভি এসে বলে, তোরা তিন্নিকে কোথায় লুকিয়ে রাখছস। সে সময় পিস্তল ধরে বলে, ‘তাড়াতাড়ি তিন্নিকে বের করে দে। নয় মাইরা ফালামু।’ তখন আমার বাবা ভয় পেয়ে যান। কারণ, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিন্নির মরদেহ শনাক্ত করার আগ পর্যন্ত অভি তিন্নির বাবার বাসায় আসতেন।”
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ভোলানাথ দত্ত এসব তথ্য এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ এ মামলায় নিহত তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুবুল করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। সকালে সাক্ষ্য দিতে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুবুল করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম আদালতে উপস্থিত হন। এরপরে সাক্ষী মাহবুবুল হকের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। তাঁর সাক্ষ্য শেষে সাক্ষী রেজাউল করিমের জবানবন্দি শেষ হয়। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সময়ের আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক নতুন দিন ধার্য করেন।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, কেরাণীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর এক নম্বর চীন-মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরাণীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন।
এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাইয়ুম আলী সরদার। এরপর নিহত তিন্নির লাশের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে সুজন নামে নিহতের এক আত্মীয় লাশটি মডেলকন্যা তিন্নির বলে শনাক্ত করেন। পরে মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ন্যস্ত হয়। আর তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন সিআইডির পরিদর্শক ফজলুর রহমান।
এরপর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমলকৃষ্ণ ভরদ্বাজ ও এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তিন্নি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়। এ ছাড়াও এই মামলায় ২২টি আলামত জব্দ করা হয়।
পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি অভিযুক্ত হলেও পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। আর অভির অনুপস্থিতিতেই ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তিন্নি হত্যা ও মরদেহ গুম সংক্রান্ত মামলায় অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।