সুনামগঞ্জে ফের বন্যা, ভেসে গেছে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মাছ
সপ্তাহের ব্যবধানে সুনামগঞ্জ জেলা আবার বন্যার কবলে পড়েছে। গত দুদিনে আবারও অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সবকটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রায় দুই হাজার ৮৬৬টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছচাষিরা প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলার সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক এবং জামালগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকা তলিয়ে গিয়ে নতুন করে বন্যা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, গত দুদিন টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী তিন দিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। তাই সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিবুর রহমান বলেন, ‘আগামী তিন থেকে চার দিন টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। তাই বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। সুরমাসহ সবকটি নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সকাল ৯টায় ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
গত ২৫ জুন প্রথম দফায় সৃষ্ট বন্যার কারণে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দোয়ারাবাজারের মূল সড়ক ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের বন্যার পানিতে সুনামঞ্জের কয়েক উপজেলার ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলে মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুত সব সড়কের কাজ করা হবে।’
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা জানান, জেলায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ছোট মৎস্যজীবীর যেমন লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে, একইভাবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার এক পুকুর মালিকের মাছও ভেসে গেছে।
মৎস্যচাষিরা আরো জানায়, বেশির ভাগ মৎস্যচাষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। আর তার ওপর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এমন ক্ষতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তাঁরা। তাই সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন উপজেলার পুকুরের প্রায় সব মাছ ভেসে গেছে। যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সরকারের দেওয়া আর্থিক প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হবে। এর আওতায় মৎস্যজীবী, ফার্মের মালিক এবং কৃষকদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।’