সুরস্রষ্টা বারী সিদ্দিকীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রখ্যাত সুরকার, গীতিকার, সংগীতশিল্পী, বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলা লোকগানের দিকপাল এই শিল্পী ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। আজ তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। হাওর অঞ্চলের মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা বারী শৈশবে সংগীতে হাতেখড়ি নেন। তালিম নেন শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্ত, ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ খ্যাতিমান অনেক শিল্পীর।
ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারী সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাঁকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনেতে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মেলনে গান গাওয়া শুরু করেন।
কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে নব্বইয়ের দশকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান এ শিল্পী। ১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী ‘রঙের বাড়ই’ নামে একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়াচান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠের মাদকতায় মাতাল হয় সংগীতপিপাসী মন। গানে গানে মানুষের কথা বলে বেড়াতেন তিনি। ভালোবাসার কথকতা উঠে এসেছে তাঁর গানে, সেইসঙ্গে বিরহীর অন্তর্জালাও তাঁর গানে প্রকাশ পেয়েছে বারবার। তাঁর হৃদয়স্পর্শী বাঁশির সুর আজও দোলা দিয়ে যায় যে কাউকে। যার প্রতিটি পরতে মিশে থাকে হৃদয় নিংরানো অনুভূতি। সংগীত রচনায়ও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই কিংবদন্তি।
১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একক গানের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী বেশকিছু চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ইত্যাদি।