সেই শিশু তুহিন হত্যায় বাবা-চাচাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আলোচিত শিশু তুহিন হত্যার ঘটনায় পুলিশ শিশুটির বাবা আব্দুল বাছির ও চাচা আব্দুল মছব্বিরসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
আজ সোমবার দুপুর ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগপত্রের বিষয় তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল শিশু তুহিনের পরিবারই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে গত আড়াই মাসে ঘটনার বিভিন্ন আলামত ও বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট, পুলিশের তদন্তে শিশু তুহিনের বাবা আব্দুল বাহির, চাচা জমশেদ, শাহরিয়ার, মছব্বির এবং চাচাত ভাই শাহারুল এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়। এজন্য আজ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, কেজাউড়া গ্রামে দুটি পক্ষ। একটি তুহিনের বাবা ও অন্যটি একই গ্রামের আনোয়ার মেম্বারের পক্ষ। উভয়পক্ষের মধ্যে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল। ২০০০ সালের প্রথম দিকে গ্রামে মুজিব নামের এক ব্যক্তি খুন হন। ওই মামলার আসামি ছিলেন তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির। এই ঘটনার পর থেকে একপক্ষ অপরপক্ষকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করতে থাকে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের দিকে আব্দুল বাছিরের বেয়াই জবর আলীর মেয়ে নিলুফা খুন হয়। এ মামলায় তুহিনের বাবা-চাচারা প্রতিপক্ষকে মামলার আসামি করেন। ওই মামলার সাক্ষী ছিলেন তুহিনের চাচা মুছাব্বির। বর্তমানে এই মামলা মীমাংসা হয়ে যাচ্ছিল। তুহিনের বাবার বিরুদ্ধে মুজিব হত্যার যে মামলাটি ছিল এই মামলার সাক্ষীর দিন ছিল ১৪ অক্টোবর।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, তুহিনের বাবা আশঙ্কা করছিলেন মুজিব হত্যা মামলায় তাঁর শাস্তি হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি তাঁর ভাতিজা শাহারুলকে নিয়ে তিন দিন আগে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তুহিনের চাচা নাছির ও চাচাত ভাই শাহারুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। চাচা ও চাচাত ভাইয়েরা পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’
‘তুহিনের বাবা-চাচারা মানুষের সমবেদনা পেতে তুহিনকে নৃশংসভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে হত্যা করেন।’
চাচাত ভাই শাহারুলের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাঁর অভিযোগপত্র শিশু আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
গত ১৪ অক্টোবর গভীর রাতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের বিভৎসভাবে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে হত্যা করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ সময় শিশু তুহিনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল ও তুহিনের চাচি ও চাচাতো বোনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরের দিন তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে দিরাই থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। এরপর বাবা-চাচা ও চাচাত ভাইকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়।