হাওরের শিশুদের স্কুলমুখী করতে ১৬৯ নৌকা
সুনামগঞ্জ হাওরবেষ্টিত জেলা। জেলার বেশিরভাগ মানুষ হাওর এলাকায় বসবাস করেন। জেলা ও উপজেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও হাওরের দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহ দেখায় না। জরিপ বলছে, জেলায় শতকরা ১১ জনই প্রাথমিকে ঝড়ে পড়ে।
এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওর এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিশুদের ঝড়ে পড়া কমাতে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসন একে আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে এক হাজার ৪৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় সুসজ্জিত করে শিক্ষার মান উন্নত করতে কাজ শুরু হয়েছে।
আবার বর্ষার মৌসুমে হাওরে পানি বৃদ্ধি পেলে প্রত্যন্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। এবার প্রশাসন ওইসব দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬৯টি নৌকা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া সারা বছর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা করে জেলা পর্যায়ে এনে পুরস্কৃত করাসহ প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য বিনোদনের অংশ হিসেবে খেলার সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে আনন্দ পায় এবং বিদ্যালয়কে একটি বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে দেখে।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অংশ হিসেবে প্রায় এক হাজার ৪৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিযোগিতা হবে। সেই সঙ্গে প্রায় দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিক মাপের জাতীয় পতাকা বিতরণ করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলার উদ্যোগে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে খেলাধূলার সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এবং লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন নাগার রুমা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, হাওরের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করাকে আমরা আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমরা এ জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিছু কাজ আমরা এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছি। বাকি কাজ আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। হাওরে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কয়েক ক্লাস পড়েই বিদ্যালয়ে আসতে চায় না বা আগ্রহ হারায়। এ জন্য আমরা শিশুদের কাছে বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করতে খেলাধূলার সরঞ্জাম দিয়েছি। মেয়েদের ও ছেলেদের আলাদা সরঞ্জাম দিয়েছি। সেইসঙ্গে লক্ষ্য করি, বর্ষা মৌসুমে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত হয় না এজন্য এবার দুর্গম এলাকায় ১৬৯টি নৌকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।