১৭ দিন টানা দ্বিতীয় দফার বন্যায় সুনামগঞ্জে দুর্ভোগ বাড়ছে
কারো ঘরে হাঁটুপানি, আবার কারো ঘরে কোমরপানি। টানা ১৭ দিন দুবারের বন্যায় কবলিত সুনামগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকার চিত্র এমন। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে খুব ধীরগতিতে কমছে এই পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
জেলার বেশির ভাগ এলাকা সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর ও শাল্লায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকা তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে পানি কিছুটা কমেছে, তাও খুব ধীরগতিতে। টানা ১৭ দিন পানির নিচে থাকায় সব উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ চরম বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সহিবুর রহমান জানান, সুনামগঞ্জে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। তাই আশা করা যাচ্ছে, এর মধ্যে বন্যার অবনতি হওয়ার সুযোগ নেই। তবে সব হাওরে বেশি পানি থাকায় এই পানি নামতে সময় লাগবে। এতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরের পাড়ের পৌরশহরের এলাকা কালীপুর ও নতুনপাড়া। সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এই এলাকাগুলোর বেশির ভাগ বাড়িঘরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি হয়ে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হলেও পানি নামছে না। পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তাই এখনো বেশির ভাগ ঘরের ভেতরে কোথাও হাঁটু, কোথাও আবার কোমরপানি আছে।
কালীপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মধু মিয়া (৬৫) জানান, পাঁচ দিন ধরে ঘরের ভেতরে বুকপানি থাকায় খুব একটা কষ্টে আছেন তাঁরা। পরিবারের অন্যদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে তিনি ও তাঁর ছেলে ঘরের সামনে নৌকায় থাকছেন। কারণ, ঘরের টিন কেউ খুলে নিয়ে যেতে পারে। তবে এই পানিবন্দি থাকার পরও কেউ কোনো সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এই এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘শুধু নির্বাচন এলেই সব নেতা এলাকায় বারবার আসেন আর প্রতিশ্রুতি দেন এবং ভোট চান। কিন্তু দুই দফার বন্যায় কেউ আসছেন না। অথচ এর আগে সবাই আসতেন। আমরা বলছি না যে আসলেই ত্রাণ দিতে হবে। কারণ, সবাইকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের তো একটু সান্ত্বনা দিতে পারেন। তাঁরা ত্রাণও পাঠান না, আবার কেউ এসে সান্ত্বনাও দেন না।
এদিকে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মঙ্গলবার পৌরশহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে তৈরি করা খাবার ও শক্ত খাদ্য বিতরণ করেছেন।
একই অবস্থা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর ও শাল্লায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
ছাতক উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদ জানান, শিল্পনগরী ছাতকের পৌরশহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ খুব কষ্ট করছে। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকতে থাকতে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছে।
তবে সীমান্ত এলাকা তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজারে নদী-তীরবর্তী এলাকা থেকে পানি কিছুটা নেমে গেছে, তবে হাওর এলাকায় পানি একই অবস্থায় আছে।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন বন্যায় দুর্গতদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে একযোগে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জে মোট ৩৫২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে সরকার থেকে প্রাপ্ত জিআর চাল, টাকা ও করোনা সচতেনতায় মাস্ক, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা করেছেন। এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। সুনামগঞ্জের জন্য আরো বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ দিন বন্যার পানি সড়কের ওপরে থাকায় জেলার সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ এবং ছাতক উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।